দুর্দশা দেখতে রাহুল আজ চটকলে

বাজার মন্দা, কাঁচামালের অভাব-সহ নানা রোগে ধুঁকছে রাজ্যের চটশিল্প। গত দু’মাসে বন্ধ হয়েছে কয়েকটি চটকল। বিপাকে পড়েছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। এই আবহে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে আজ, শনিবার শ্রীরামপুরের ওয়েলিংটন চটকলে আসছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ওই চটকলের মাঠে এসে পৌঁছবেন এআইসিসি-র সহ সভাপতি রাহুল। চটকলের মাঠে তৈরি ম্যারাপের নীচে প্রায় দেড়শো শ্রমিকের মুখোমুখি হবেন তিনি। যে আলোচনার পোশাকি নাম ‘চৌপালা’। তবে, রাহুলের সঙ্গে আলোচনায় চটশিল্পের বেহাল অবস্থা আদৌ ঘুচবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শ্রমিকেরা। তাঁদের একাংশ চাইছেন, গোটা পরিস্থিতি কেন্দ্র সরকারের গোচরে আনুন রাহুল।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল

কলকাতা ও শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৫ ০২:২৭
Share:

ওয়েলিংটন চটকলের মাঠে সিপি জোশী-সহ কংগ্রেস নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।

বাজার মন্দা, কাঁচামালের অভাব-সহ নানা রোগে ধুঁকছে রাজ্যের চটশিল্প। গত দু’মাসে বন্ধ হয়েছে কয়েকটি চটকল। বিপাকে পড়েছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। এই আবহে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে আজ, শনিবার শ্রীরামপুরের ওয়েলিংটন চটকলে আসছেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

কংগ্রেস সূত্রের খবর, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ওই চটকলের মাঠে এসে পৌঁছবেন এআইসিসি-র সহ সভাপতি রাহুল। চটকলের মাঠে তৈরি ম্যারাপের নীচে প্রায় দেড়শো শ্রমিকের মুখোমুখি হবেন তিনি। যে আলোচনার পোশাকি নাম ‘চৌপালা’। তবে, রাহুলের সঙ্গে আলোচনায় চটশিল্পের বেহাল অবস্থা আদৌ ঘুচবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শ্রমিকেরা। তাঁদের একাংশ চাইছেন, গোটা পরিস্থিতি কেন্দ্র সরকারের গোচরে আনুন রাহুল।

ওই চটকলেরই স্পিনিং বিভাগের শ্রমিক নুর হাসান বলেন, ‘‘চটশিল্পের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রাহুলজি এলেই যে দু’দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, বলছি না। তবে তিনি সরকারের কাছে দুরাবস্থার কথা তুলে ধরুন।’’ মহম্মদ ফিরোজ আহেদ নামে ওই চটকলের ‘তাঁত’ বিভাগের এক শ্রমিক মনে করেন, প্লাস্টিক বা সিন্থেটিকের বাড়বাড়ন্ত আটকে চটের ব্যবহার বাড়ালেই এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য শুধু বস্তা নয়, চটের অন্য সামগ্রীর পরিমাণ বাড়াতে হবে। আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে।

Advertisement

‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তার বলয়ে থাকা রাহুলের সফর নিশ্ছিদ্র করতে পুলিশ প্রশাসনের ঘুম ছুটেছে। মাঠের নিরাপত্তা থাকছে স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)-এর হাতে। বুধবারেই ডিআইজি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বে এসপিজি-র ছয় সদস্যের একটি দল শ্রীরামপুরে পৌঁছয়। পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত রাজ্য পুলিশের অন্তত পাঁচশো অফিসার-কর্মী মোতায়েন থাকবেন। পুলিশের দাবি, শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে জি টি রোড ধরে আসবেন রাহুল। ফলে, সকালের ব্যস্ত সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অথচ অপরিসর ওই সড়কে যানজটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিশকর্তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে যান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অন্য রাস্তা দিয়ে যানবাহন ঘুরিয়েও দেওয়া হতে পারে। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা সেরে রাহুল কলকাতায় যাবেন।

কিন্তু রাহুলের ‘চৌপালা’র জন্য ওয়েলিংটন চটকলকে কেন বাছা হল?

শুক্রবার ওই চটকলের মাঠ পরিদর্শনের ফাঁকে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সিপি জোশী বলেন, ‘‘এ রাজ্যের চটকলের পরিস্থিতি নিয়ে রাহুল উদ্বিগ্ন। তিনি সরাসরি শ্রমিকদের মুখ থেকে তাঁদের পরিস্থিতির কথা শুনতে চান। সব চটকলেই তো প্রায় একই অবস্থা। তাই একটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ কংগ্রেসের অন্দরের খবর, ওই চটকলে দলের শ্রমিক সংগঠন পোক্ত। তাই ওই চটকলকে বাছা হয়েছে। এ দিন জোশীর সঙ্গে ছিলেন এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ খান, জেলা আহ্বায়ক প্রীতম ঘোষ।

বছর খানেক ধরেই গঙ্গার দু’পাড়ের চটকলগুলির অধিকাংশ ধুঁকছে। যে হুগলিতে আজ রাহুল আসবেন, সেখানে বর্তমানে দু’টি চটকলে কাজ বন্ধ। রিষড়ার হেস্টিংস চটকলে শ্রমিক অসন্তোষে অচলাবস্থা চলছে। শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটেও কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন কার্যত বন্ধ।

তবে, রাহুলকে আনা হলেও হুগলিতে জেলা কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে এতে মিটছে না, তা এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দলের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে আব্দুল মান্নানের বিরোধ সর্বজনবিদিত। রাহুলের সফরের তদারকি করছেন অধীর-ঘনিষ্ঠ প্রীতম ঘোষ। মান্নান বা তাঁর ঘনিষ্ঠ দলের জেলা সভাপতি সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় সেখানে গরহাজির। মান্নান আদৌ রাহুলের কর্মসূচিতে থাকবেন কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়। অধীর-গোষ্ঠীর নেতাদের নাম না করে মান্নান বলেন, ‘‘ওঁরা যদি ভেবে থাকেন রাহুলকে আনছেন বলেই মাথা নিচু করে চলে যাব, সেটা ভুল।’’ ওয়েলিংটনে মান্নান থাকছেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি প্রীতমের কাছ থেকেও। চটকলগুলির বেহাল অবস্থার কথা তুলে তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য আর কেন্দ্র মিলে গঙ্গাপাড়ের চটকলগুলির গঙ্গাপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করে ফেলছে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্তের কটাক্ষ, ‘‘কেন্দ্রে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকে কংগ্রেস চটকলের ভালর জন্য কী করেছে! গোটা দেশে ওদের দুর্দিন। তাই রাহুল এখন রাজনৈতিক চমক দিতে আসছেন। চটকলের পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্র সরকার দায়ী। আমরা নই। রাজ্য সরকার বরং পাট-নীতি তৈরি করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন