বৃষ্টিতেও ক্ষতি পুষিয়ে আলুতে লাভের আশা

বিলম্বিত শীত এবং গত মরসুমে আলুর দাম না পাওয়া--জোড়া ফলায় এ বার আলুর ভাল দাম পাওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যে। কিন্তু মাঝে বৃষ্টির চোখ রাঙানিতে বিক্ষিপ্তভাবে হলেও কোথাও কোথাও চাষির বাড়া ভাতে ছাই ফেলে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৬
Share:

পান্ডুয়ায় মাঠ থেকে তোলা হচ্ছে আলু। ছবি- সুশান্ত সরকার।

বিলম্বিত শীত এবং গত মরসুমে আলুর দাম না পাওয়া--জোড়া ফলায় এ বার আলুর ভাল দাম পাওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যে। কিন্তু মাঝে বৃষ্টির চোখ রাঙানিতে বিক্ষিপ্তভাবে হলেও কোথাও কোথাও চাষির বাড়া ভাতে ছাই ফেলে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও কৃষিকর্তারা অভয় দিয়েছেন, যেহেতু এর আগে প্রকৃতি দীর্ঘদিন ধরেই কার্যত শুকনো ছিল, সেই কারণে এই বৃষ্টির ফল ততটা সুদূরপ্রসারী হবে না। কৃষিকর্তারা এমনটা মনে করলেও হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে অবশ্য বৃষ্টিতে আলুর ভালই ক্ষতি হয়েছে।

Advertisement

গত কয়েকটা মরসুম রাজ্যে আলুর ভাল ফলন হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রকৃতি নয়, লাভের কড়ি ঘরে তুলতে চাষি এবং আলুর ব্যবসায়ীদের কাছে বাধা হয়েছিল রাজ্যের নীতি। পড়শি রাজ্য মূলত ওড়িশা, বিহার এবং ঝাড়খন্ডে এ রাজ্যের আলুর কদর রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা এখন থেকে ওই সব রাজ্যে আলু পাঠিয়ে দুটো পয়সার মুখ দেখেন। কিন্তু বাদ সাধে সরকারি নীতি। গত দু’টি মরসুমে সরকারি তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ভিন রাজ্যে খেয়াল খুশি মতো আলু পাঠানো যাবে না। যুক্তি ছিল, পড়শি রাজ্যে আলু পাঠাতে গিয়ে জোগান ও চাহিদার ভারসাম্যের তফাত হচ্ছে রাজ্যের বাজারে। ফলে এখানে আলু দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের তরফে বার বার অনুরোধ করেও কোনও ফল হয়নি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে। রাজ্যের সীমানায় আলুর ট্রাক আটকাতে পুলিশি পাহারা বসানো হয়। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েন প্রচুর আলুচাষি এবং ব্যবসায়ীরা। এমনকী প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় আলু না পেয়ে খদ্দেরদের হাতে ব্যবসায়ীদের মার খাওয়ার ঘটনাও ঘটে। শেষ পর্যন্ত ওড়িশার তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলু পাঠাতে অনুরোধ জানানোর পরে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল হয়।

তবে গত মরশুমেও আলুর দাম তেমন পাননি চাষি থেকে ব্যবসায়ীরা। আলু নিয়ে গত দু’ মরসুমের অভিজ্ঞতায় চলতি মরলুমে রাজ্যে আলুর ফলন অনেকটা কম হয়। তার উপর প্রকৃতিও এ বার অনেকটাই বিরূপ। এ বার শীত যেমন ভাল পড়েনি তেমন যে টুকু পড়েছিল তাও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফলে আলুর ধসা রোগ দেখা দেয়। সব মিলিয়ে আলুর ফলন কম হওয়ায় এবার আলুর ভাল দাম পেতে শুরু করেছেন চাষিরা। জ্যোতি আলু সাড়ে চারশো টাকা বস্তা (৫০ কেজি) পর্যন্ত পান চাষিরা।

Advertisement

এ বার বৃষ্টিতে হুগলির পাণ্ডুয়ার সরাই তিন্না, পোটবা, নিয়ালা এলাকার নীচু জমিতে চাষ করা আলু জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার নিচু এলাকার জমিতেই মূলত আলুর ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তারকেশ্বর, কেশবচক, সিঙ্গুর জেলার যে সব উচুঁ জায়গায় আলু চাষ হয়েছে সে সব জায়গায় ক্ষতির মাত্রা কম। জেলার কানানদী এলাকার চাষি গোপাল মান্না বলেন, ‘‘এ বার আলুতে চাষিরা কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় লাভের মাত্রা কম হবে। বাজারে জ্যোতি ৪৪০ এবং চন্দ্রমুখীর বস্তা সাড়ে পাঁচশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন