উড়ালপুল-কাণ্ড

মৃত্যু মিছিলে কোন্নগরের প্রৌঢ়

পেশার তাগিদেই ‘অভিশপ্ত’ দুপুরে কলকাতায় যেতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ফেরা হল না তাঁর। ভোরের আলো ফোটার আগেই পরিজনেরা দু’দশকের ভাড়াবাড়ি ছুঁয়ে তাঁর দেহ নিয়ে ছুটলেন উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরে। তিনি সন্তোষকুমার দুবে (৫১)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোন্নগর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৫
Share:

সন্তোষকুমার দুবে

পেশার তাগিদেই ‘অভিশপ্ত’ দুপুরে কলকাতায় যেতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ফেরা হল না তাঁর। ভোরের আলো ফোটার আগেই পরিজনেরা দু’দশকের ভাড়াবাড়ি ছুঁয়ে তাঁর দেহ নিয়ে ছুটলেন উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরে। তিনি সন্তোষকুমার দুবে (৫১)।

Advertisement

কলকাতার পোস্তায় নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। নিয়তি সেই তালিকায় নাম তুলে দিয়েছে সন্তোষবাবুর। পেটের টানে সেই কবে চলে এসেছিলেন সন্তোষবাবু। বছর কুড়ি ধরে তিনি ভাড়া থাকতেন কোন্নগরে কানাইপুরের আদর্শনগরে একটি বাড়িতে। দোকানে দোকানে সাবান, শ্যাম্পু, পাউডার সরবরাহের কাজ করতেন। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরা সংসার ছি‌ল। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে রাজনন্দিনীর বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। ছেলে সত্যম স্নাতক।

পড়শিরা জানান, সাবান, শ্যাম্পু বিভিন্ন দোকানে দিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সন্তোষবাবু। গিয়েছিলেন পোস্তা এলাকাতেই। তিনি ফিরলেন না। ফিরল নিথর দেহ। বিকেলে দেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বাড়ির লোকেরা সেখানে গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন। তাঁরা জানান, সন্তোষবাবুর মাথার পিছনে ক্ষত ছিল। চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান। বাড়িওয়ালার ছেলে রাহুল উপাধ্যায় জানান, দুর্ঘটনার কথা কানে আসার পর থেকেই সন্তোষবাবুর স্ত্রী এক বিন্দু স্থির থাকতে পারছিলেন না। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সত্যম মোবাইলে ফোন করে বাবার মৃত্যু কথা জানান। তিনি বন্ধুদের নিয়ে মর্গে ছুটে যান। ময়না-তদন্তের পরে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দেহ হাতে পান। ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ দেহ কানাইপুরের ভাড়াবাড়িতে পৌঁছয়। সেখান থেকে শেষকৃত্যের জন্য পরিবারের সকলে উত্তরপ্রদেশ রওনা হন। শনিবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে সত্যম বলেন, ‘‘বাবার এমন ভাবে মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। একটা চাকরি না পেলে সংসার চালানো মুশকিল হবে।’’

Advertisement

কুড়ি বছর ধরে কানাইপুরে থাকার সুবাদে সন্তোষবাবু এবং তাঁর পরিবার কাছের লোক হয়ে উঠেছিলেন রাহুলদের। পড়শিরা জানান, সন্তোষবাবু এলাকায় ভাল মানুষ বলেই পরিচিতি ছিলেন। তাঁর এ হেন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে এই এলাকাতেও। সরকার মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু তাতে আর কী হবে! রাহুলের কথায়, ‘‘এত বছর ধরে ওঁরা আমাদের পরিবারের মতোই হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আচমকা কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল! সত্যম একটা চাকরি পেলে ওঁদের পরিবারটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন