ভগ্ন: হাওড়ার এই বাড়িতেই থাকতেন বঙ্কিমচন্দ্র। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
হেরিটেজ ভবন ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু বছর পেরিয়েও সংস্কার হয়নি হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোডে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি। অভিযোগ, অর্থ বরাদ্দের পরেও ওই বাড়ি সংলগ্ন বঙ্কিমের নামাঙ্কিত পার্কে সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার তৈরির জন্য একটিও ইট পড়েনি। ফলে ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা আরও একটি বাড়ি এখন মৃত্যুঘণ্টা শোনার প্রতীক্ষায়।
হাওড়ায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম দফায় কাজে যোগ দেন ১৮৮১ সালে। প্রথমে তিনি কলকাতা থেকেই যাতায়াত করতেন। পরে পঞ্চাননতলা রোডের ২১৮ নম্বরের এই বাড়িতে ভাড়া নিয়ে উঠে আসেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি যখন ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে হাওড়ায় আসেন, তখনও পঞ্চাননতলা রোডের ওই একই বাড়িতে ওঠেন। সেখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’।
হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বাড়ির সামনে যে ১৭ কাঠা মাঠটি রয়েছে, সাহিত্যসম্রাটের স্মৃতিতে সেটির নামকরণ হয়েছিল বঙ্কিম পার্ক। গত বছরের গোড়ায় হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী ২১৮, পঞ্চাননতলা রোডের বাড়িটিকে হেরিটেজ ভবন ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার মূলে বাড়িটির স্থাপত্য নয়, এক সময়ের বাসিন্দা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ই ছিলেন একমাত্র কারণ। পাশাপাশি বাড়ির সামনের পার্কের একাংশে বঙ্কিম সংগ্রহশালা, পাঠাগার ও একটি অডিটোরিয়াম করার জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মেয়র। স্থির হয়, বাড়িটি কিনে সংস্কার করবে পুরসভা।
হাওড়া পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, বাড়ির মালিকেরা সেটি বিক্রির ব্যাপারে কোনও আগ্রহ না দেখানোয় সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া যায়নি। এমনকি ফাঁকা জমিতে পার্ক এবং বঙ্কিম সংগ্রহশালা করার ব্যাপারে আদালত স্থগিতাদেশ জারি করায় পুরো প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। কারণ স্থানীয়েরাই পুরসভার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। মেয়র বলেন, ‘‘বাড়িটি হেরিটেজ ভবনের মর্যাদা দেওয়ার পরে সংস্কারের অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। মালিকদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছিল। পরে তাঁরা কেন আগ্রহ দেখাননি, তা নিয়ে খোঁজ নিতে বলেছি।’’
ওই ভবনটি সংস্কারের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরা বলেন, ‘‘বাড়ি এবং বঙ্কিম পার্কের সংস্কারের বিষয়টি মেয়র পরিষদের সভায় পাশ হওয়ার পরে কাজ শুরু হয়েছিল। ওই সময়েই স্থানীয়েরা পুরসভায় গণস্বাক্ষর করা অভিযোগ জমা দেন এবং আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেন। অন্য দিকে, বাড়িটির মালিকেরা কিছু না জানিয়ে বিদেশে চলে যান। ফলে সংস্কার প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ।’’