এ কেমন প্রেম? গনগনে দুপুরে পুকুরের জলে স্বামীদের চোবালেন ওঁরা

সূর্য তখন আগুন ঝরাচ্ছে। সূর্য তখন আগুন ঝরাচ্ছে। জনাছয়েক লোককে জলে চোবাতে শুরু করলেন জনাছয়েক মহিলা। কেউ কারও অপরিচিত নন। স্বামী-স্ত্রী। গরমের দুপুরে এ কেমন প্রেম! প্রেম?

Advertisement

পী়যূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৭ ১২:০৫
Share:

সূর্য তখন আগুন ঝরাচ্ছে।

Advertisement

গাছ-গাছালিতে ঘেরা নিস্তরঙ্গ পুকুর পাড়ে হঠাৎ আলোড়ন!

জনাছয়েক লোককে জলে চোবাতে শুরু করলেন জনাছয়েক মহিলা। কেউ কারও অপরিচিত নন। স্বামী-স্ত্রী। গরমের দুপুরে এ কেমন প্রেম!

Advertisement

প্রেম? মহিলাদের মেজাজ তিরিক্ষি। ‘‘জলে চোবালে যদি ওদের চোলাই-প্রেম ছাড়ে, সেই চেষ্টাই করছি,’’— বলছিলেন নেশায় বুঁদ গরিবগুর্বো লোকগুলোর অর্ধাঙ্গিনীরা। সাড়া দেওয়ার অবস্থাতেই নেই যে তাঁদের স্বামীরা!

সোমবার দুপুরে আরামবাগের বাজুয়া গ্রামের পোদোর পুকুর পাড়ে এই দৃশ্যের আগেই অবশ্য রণংদেহি মূর্তিতে দেখা গিয়েছে গ্রামের মহিলাদের। শান্তি রায়, অপর্ণা বাগ, সুশীলা রায়ের মতো শ’খানেক মহিলা আচমকাই লাঠিসোটা নিয়ে ওই পুকুর পাড়ের অন্তত ১৫টি চোলাই ঠেকে হামলা চালান। মদ নষ্ট করেন। মদ তৈরির সরঞ্জাম ভেঙে দেন। অবশ্য ভাটি-মালিকদের ধরতে পারেননি। তারা পালায়।

এই হইচইয়ের মধ্যেও বসে ছিলেন কয়েক জন গ্রামবাসী। আকণ্ঠ চোলাই খেয়ে নড়াচড়ার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তাঁরা। স্ত্রীরা তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শুনতে হচ্ছিল কটূ কথা। তাই শেষমেশ জল-দাওয়াই! শান্তিদেবী তাঁর স্বামী মধুসূদনবাবুকে পুকুরে নিয়ে গেলেন। সেই পথ ধরলেন অপর্ণা বাগও। স্বামী রবি রায়কে পুকুর পাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতে হাঁফিয়ে গিয়েছিলেন সুশীলা। তবু হাল ছাড়েননি। তার পরে পুকুর পাড়ে বসিয়ে চোবানো শুরু। সব মিলিয়ে মিনিট পনেরোর চেষ্টা। লাভও হল। কিছুটা প্রকৃতিস্থ হলেন তাঁদের স্বামীরা। শান্তির কথায়, ‘‘কাজে বেরিয়ে স্বামী দুপুরে বাড়ি ফেরেনি। খবর নিয়ে জানতে পারি, অনেকের সঙ্গে পোদোর পাড়ে বসে চোলাই গিলছে। তার পরেই লাঠিঝাঁটা নিয়ে দল বেঁধে বেরোই।”

ছোট্ট গ্রামটিতে বেশির ভাগ মানুষই খেতমজুরি বা দিনমজুরি করেন। কিন্তু সারাদিন খেটে যা আয় হয়, তার বেশির ভাগটাই তাঁরা চোলাইয়ের ঠেকে দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, নেশা করে বাড়ি ফিরে পরিবারে অশান্তিও ছিল চেনা ছবি। মহিলারা জানান, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াতেই তাঁরা এ দিন রাস্তায় নেমেছিলেন।

চোলাইয়ের রমরমা নিয়ে গোঘাটের দু’টি ব্লকেই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চোলাই উচ্ছেদ নিয়ে পুলিশ ও আবগারি দফতরের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও আছে। গোঘাট আবগারি দফতরের ওসি গৌরাঙ্গ ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, “নিয়মিত অভিযান চালাই। চোলাইয়ের আধিক্য অনেক কমেছে।” কিন্তু গ্রামবাসীরা বলছেন, প্রশাসন সক্রিয় হলে এমন দিন আসত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন