ছাত্রভোটের সময় শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীকে নিয়ে বিস্তর নাটক হয়েছে। এ বার একপ্রস্ত নাটক হল ছাত্রসংসদ গঠন করা নিয়েও। নাটকের স্থান সেই শ্রীরামপুর কলেজ।
বুধবার দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোটে জেতা শ্রেণি প্রতিনিধিদের (সিআর) একাংশ বোর্ড গঠন করে ফেলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দলের নির্দেশে অধ্যক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি। সব মিলিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দিনভর ডামাডোল চলল এই কলেজে।
ছাত্রভোটে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত ছিল। একটি গোষ্ঠী কাউন্সিলর ঝুম মুখোপাধ্যায়ের (বর্তমানে তিনি সাসপেন্ড) অনুগামী। অপর পক্ষ কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহের গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দলের তরফে ৪৭ জন প্রার্থীর নাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, বাকিদের দল মনোনয়ন তুলে নিতে বললেও বাস্তবে তা হয়নি। বাকিরা নির্দল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। উল্টে সন্তোষবাবুর গোষ্ঠীর ছাত্রনেতাদের মদতে সেই নির্দল প্রার্থীরা জিতে যান। ফলে কলেজে ক্ষমতার রাশ চলে যায় সন্তোষবাবুর অনুগামীদের হাতেই। এ নিয়ে দলের অন্দরে চাপানউতোর শুরু হয়।
তৃণমূল শিবিরের খবর, এই পরিস্থিতিতে গোষ্ঠীকোন্দল না মেটা পর্যন্ত দলীয় সংগঠনের সিআর-দের ছাত্র সংসদের বোর্ড গড়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার ছিল বোর্ড গঠনের দিন। ঝুমদেবীর গোষ্ঠীর ১৩ জন সিআর কলেজে যাননি। কিন্তু অপর গোষ্ঠীর সিআররা কলেজে যান। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ নির্দলদের সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠনও করে ফেলেন তাঁরা। সভাপতি হন সন্তোষবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত বিএ দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া রুমি দাস। সাধারণ সম্পাদক হন রুমির সহপাঠী অজিতকুমার যাদব।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৃণমূলের অন্দরে জলঘোলা শুরু হয়ে যায়। খবর যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কানে। পার্থবাবু জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরেই সিআর-দের পদত্যাগের নির্দেশ দেন তপনবাবু। বিকেল ৪টে নাগাদ পদত্যাগের চিঠি জমা দেন ছাত্র সংসদের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। পরে তাঁরা দাবি করেন, ‘‘দল যে বোর্ড গঠন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে, কলেজে ঢোকার পরে তা জানতে পারি। আমরা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের চাপে নির্দলদের সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়। পরে দলের নির্দেশ পেয়েই আমরা সকলে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’’ তপনবাবু বলেন, ‘‘আমাদের কিছু ছেলেমেয়ে বোর্ড গঠন করতে গিয়েছিল। ওরা পদত্যাগ করেছে। কেন ওরা কলেজে গিয়েছিল, দল জানতে চাইবে।’’
কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ ভ্যানস্যাংগ্লুরা বলেন, ‘‘গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াই নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে এবং শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। ৪৮ জনের মধ্যে ৩০ জন সিআর বোর্ড গঠনের সময় উপস্থিত ছিলেন। কাউকে চাপ দেওয়ার প্রশ্নই নেই। যা হয়েছে, সবই নিয়ম মেনে।’’ পদত্যাগ প্রসঙ্গে অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।