ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছেন দুই তরুণী। আরামবাগে। ছবি: মোহন দাস
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার রয়েছে। পুলিশের বড়কর্তারা আশ্বাসও দিচ্ছেন। কিন্তু আরামবাগে পথ দুর্ঘটনা এবং তার জেরে প্রাণহানি এড়ানো যাচ্ছে না।
শুধু আরামবাগ শহরেই চলতি সপ্তাহে এ পর্যন্ত চারটি পৃথক দুর্ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখমও হন একাধিক মানুষ। মহকুমার চারটি থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়া এবং আরামবাগ মিলিয়ে গত জানুয়ারি থেকে মে মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত পথ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৩১ জন।
পথ দুর্ঘটনার এই ধারাবহিকতা নিয়ে মহকুমা জুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশ এবং পূর্ত দফতরের কর্তারা যৌথ ভাবে মহকুমার ‘অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ’ এলাকা খতিয়ে দেখে যান। পরিদর্শন শেষে এডিজি (ট্র্যাফিক) বিবেক সহায় জানিয়েছিলেন, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্পটি যথাযথ রূপায়ণের লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন সড়কের ‘ব্ল্যাক স্পট’গুলি খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। ওই সব জায়গায় যাতে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেইমতো ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে।”
পুলিশকর্তার ওই আশ্বাসের পরেও আরামবাগে অবস্থার কোনও পরিবর্তন তো দূরঅস্ত্, দুর্ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিযোগ। এমনকী, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি রূপায়ণে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে হামেশাই পথ অবরোধ সামিল হচ্ছে শহরের নানা সংগঠন। চলতি সপ্তাহেই দুর্ঘটনার জেরে অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশ এসে যান নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দেয়। সোমবার সকাল থেকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে কড়া নজরদারিও চালু করে পুলিশ। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে সেই নজরদারি শিথিল বলে অভিযোগ। মঙ্গলবারই পারুলে দুর্ঘটনায় জখম হন এক জন।
দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশও। এসডিপিও (আরামবাগ) কৃশানু রায় জানান, মসৃণ পরিবহণ ব্যবস্থা বজায় রাখতে যে সব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে, সেই সব জায়গা চিহ্নিত করা হচ্ছে। শহরে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পল্লিশ্রী, বসন্তপুর, কালীপুরের মতো ৪-৫টি জায়গায় ‘স্পিড ব্রেকার’ তৈরি করা হবে। অবৈধ পার্কিং নিয়ে আইনানুগ পদক্ষেপও শুরু হচ্ছে। তা ছাড়া, গাড়ির গতি নির্দিষ্ট করে শীঘ্রই বিভিন্ন রাস্তায় বোর্ড ঝোলানো হবে। সাধারণ মানুষকেও পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
কেন এত দুর্ঘটনা?
ভৌগোলিক ভাবে আরামবাগ পাঁচটি জেলার (বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর এবং হাওড়া) সংযোগস্থল। বিভিন্ন রাস্তায় সারাদিনে কয়েক হাজার গাড়ি চলে। কলকাতা এবং তারকেশ্বরে যোগাযোগেরও মূল রাস্তা রয়েছে এখানে। রাস্তার হাল ফেরায় গাড়ির গতি বেড়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বেআইনি যানবাহনের (অটো, টোটো ইত্যাদি) সংখ্যাবৃদ্ধি, বেআইনি পার্কি, যত্রতত্র হকার, রাস্তায় ইমারতি সামগ্রী ফেলে রাখা দুর্ঘটনার কারণ। পুলিশের একাংশও তা মানছে।