থ্যাঁতলানো মুখ। পাশেই পড়ে রক্তমাখা সিমেন্টের চাঙড়। ভোরবেলা পার্কের ভিতরে এক যুবককে এ ভাবে পড়ে থাকতে দেখে চমকে উঠেছিলেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে েদহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের ধারণা, কলকাতার কুখ্যাত ‘স্টোনম্যান’ যে ভাবে খুন করত, ওই যুবককে সে ভাবেই মারা হয়েছে।
আটের দশকের শেষ দিকে স্টোনম্যান-আতঙ্ক নাড়িয়ে দিয়েছিল রাতের কলকাতাকে। কে বা কারা, কী কারণে সেই সব খুন করেছিল, তা আজও সবার অজানা। শহরের পথই যাঁদের ঠিকানা, তাঁরাও সেই সময়ে রাতে ফুটপাথে শুতে ভয় পেতেন। মাঝে দু’-এক বার হাওড়া শহরেও একই কায়দায় খুনের ঘটনা ঘটেছিল। বুধবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ মধ্য হাওড়ার বিজয়ানন্দ পার্কের ভিতরে অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে স্টোনম্যানের কথাই প্রথমে মনে হয়েছে তদন্তকারীদের। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই এলাকায়।
নরসিংহ দত্ত রোডের পাশে পুরসভার তিন নম্বর বরো অফিসের ঠিক পিছনে বিজয়ানন্দ পার্ক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অন্যান্য দিনের মতো এ দিন ভোরেও সেখানে হাঁটতে এসেছিলেন অনেকে। হঠাৎ তাঁরা দেখেন, পার্কের ভিতরে বেঞ্চের পাশে পড়ে রয়েছেন এক যুবক। গোটা মুখ বীভৎস ভাবে থ্যাঁতলানো। পাশে সিমেন্টের মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে রক্তের ছিঁটে। এমনকী, পার্কের লোহার রেলিংয়েও রক্তের ছোপ। মৃতদেহের পাশে পড়ে রয়েছে রক্ত মাখা একটা সিমেন্টের চাঙড়।
খবর যায় ব্যাঁটরা থানায়। পুলিশ এসে মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই পার্কে দীর্ঘদিন ধরেই রাতের অন্ধকারে নানা অপরাধমূলক কাজকর্ম চলছে। মাদক বেচাকেনা থেকে মদ্যপান— সবই হচ্ছে অবাধে। পুলিশ সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয় না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রৌঢ় প্রাতর্ভ্রমণকারী বলেন, ‘‘রাতে এই পার্কের ভিতরে অনেক বহিরাগত যুবক এসে নানা দুষ্কর্ম করে। হেরোইন থেকে মদ— সব রকম নেশার জিনিসই এখানে বিক্রি হয়। সকালে হাঁটতে এসে অনেক কিছু পড়ে থাকতে দেখি।’’
পুলিশের সাফাই, ওই পার্কে এর আগে বহু বার তল্লাশি চালানো হয়েছে। অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তখনকার মতো পার্কের ভিতর দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ ভাবে খুনের ঘটনা আগে ঘটেনি।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহের পরনে ছিল কালো প্যান্ট ও সাদা জামা। পায়ে ও হাতে সিমেন্ট-বালি লেগে থাকায় পুলিশের ধারণা, ওই যুবক সম্ভবত পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। ঘটনাস্থলের কাছে একটি ভ্যানরিকশা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ভ্যানটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেটি ওই যুবকের কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের অনুমান, কাজ থেকে ফিরে রাতে ওই পার্কেই ভ্যানরিকশা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ওই যুবক। তখনই কেউ ওই সিমেন্টের চাঁই দিয়ে থেঁতলে তাঁকে খুন করে।
হাওড়ার গোয়েন্দা-প্রধান সুমিত কুমার ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বলেন, ‘‘এই ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, স্টোনম্যানের কায়দায় খুন করা হয়েছে। তবে এই খুনের পিছনে অন্য কোনও শত্রুতা কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’