Suvendu Adhikari

বিজেপির পথে চললেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সমীরণ

সমীরণের অভিযোগের তির মূলত হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার দিকে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩৩
Share:

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একমঞ্চে সমীরণ মিত্র । —নিজস্ব চিত্র।

তিনি চার দশক ধরে রাজনীতি করছেন। বর্তমানে হুগলি জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ। শাসকদলের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে যখন অভিযোগের ফোয়ারা ছুটছে, তখন তাঁর গায়ে কলঙ্কের ছিটেফোঁটাও নেই। বছর খানেক আগে বাড়ি সংস্কার করেছেন। সংস্কার বলতে টালির বদলে চাল হয়েছে অ্যাসবেসটসের। ঘরের চেহারা অতি সাধারণ।

Advertisement

হুগ‌লির এ হেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তৃণমূল নেতা সমীরণ মিত্র ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি শুভেন্দু অধিকারীর পথ অনুসরণ করবেন। রাজনৈতিক মহলের চর্চা, শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা। সে ক্ষেত্রে তিনিও ওই দলেই যোগ দেবেন বলে সমীরণ জানিয়েছেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘চল্লিশ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলাম। ঘোর দুঃসময়েও ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনও ভাবিনি। আজ বাধ্য করা হল।’’

কেন দল ছাড়ার ভাবনা?

Advertisement

সমীরণের অভিযোগের তির মূলত হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার দিকে। তাঁর অভিযোগ, ২০১১ এবং ’১৬ সালের ভোটে বেচারাম মান্নার হয়ে ভোটে তাঁরা খেটেছিলেন। কিন্তু গত তিন বছর ধরে ব্লকে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের ব্রাত্য করে দেওয়া হয়। লোকসভা ভোটে বসে থাকতে হয়। সিঙ্গুরে জমি-আন্দোলন পর্বে দলের দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে সমীরণ বলেন, ‘‘সমষ্ঠিগত চিন্তাভাবনা, নীতি-আদর্শের পরিবর্তে এখন ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার খেলা চলছে তৃণমূলে। দল মানুষের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। দলনেত্রীকে সব জানিয়েছিলাম। লাভ হয়নি। কয়েক দিন আগে দলনেত্রী ফোনে কথা বলেছেন। কিন্তু সম্মানের সঙ্গে দল করতে পারব, এই নিশ্চয়তা কোথায়?’’

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনায় থাকা নেতাদের উদ্দেশে গত মঙ্গলবার জনসভায় মমতা জানান, দশ বছর ধরে দল এবং সরকারের সুবিধা নিয়ে যাঁরা অন্য দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করছেন, তিনি তাঁদের সহ্য করবেন না। এই প্রসঙ্গ তুলে সমীরণ বলেন, ‘‘খাওয়ার নীতিতে সবাই বিশ্বাসী নন, দিদি যেন মাথায় রাখেন। জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ হিসেবে সাত হাজার টাকা সাম্মানিক পাই। আর কোনও রোজগার নেই। ভালবেসে দল করে যৌবন অতিবাহিত করে ফেলেছি। দুর্নীতি দূর, একটা চাকরি পর্যন্ত চাইনি। রোজগারের নিশ্চয়তা না থাকায় বিয়ে করিনি।’’

সমীরণের দলত্যাগের সম্ভাবনার প্রশ্নে জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘উনি আমাদের দলের পুরনো সহকর্মী। উনি অন্য দলে যাচ্ছেন, এমন কিছু আমাকে বলেননি। আপনাদের কথা শুনে কিছু বলব না।’’ বেচারাম কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘সমীরণবাবুদের মতো লোককে টাকা দিয়ে কেনা যায় না। আখের গোছানোর হলে উনি কাঁচা বাড়িতে থাকতেন না। দামি গাড়ি চাপতে পারতেন। শুধু উনি কেন, তৃণমূলের বদ্ধ ঘর ছেড়ে সবাই বিজেপির মুক্ত হাওয়ায় আসতে চাইছেন। হুমকি দিয়ে কাউকে ধরে রাখতে ওরা পারবে না।’’

হরিপালের প্রাক্তন বিধায়ক, সিপিএম নেতা রূপচাঁদ পালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূলের সবাই দুর্নীতিপরায়ণ, এ কথা আমরা কখনও বলিনি। সমীরণবাবুরা ওঁদের দলে ব্যতিক্রমী ভাল চরিত্রের মধ্যে পড়েন।’’

১৯৭৮ সালে হরিপাল কলেজে ইন্দিরা কংগ্রেস পরিচালিত ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি সমীরণের। তখন থেকেই মমতার ছায়ায়। ’৯৮ সালেই তৃণমূলে যোগ। ওই বছর সহদেব পঞ্চায়েতের প্রধান হন। ২০০১ এবং ’০৬ সালে বিধানসভা ভোটে সিপিএমের কাছে পরাজিত হন। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে জেতেন। জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ হন। ’১৮ সালে আরামবাগ থেকে জেতার পরে জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ হন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement