অভিযান: চলছে সাফাই। বুধবার, সাঁতরাগাছি ঝিলে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, সাঁতরাগাছি পাখিরালয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হাওড়া পুরসভার। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছিল, গোটা ঝিল পানায় ভরে গেলেও তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেনি তারা। পুরসভার যুক্তি ছিল, কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এগিয়ে এলে তাঁদের লোকবল ও যন্ত্র দিয়ে সাহায্য করা হবে। এর বেশি দায়িত্ব পুরসভা নিতে পারবে না।
পুর প্রশাসন দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ঝিল পরিষ্কারে এগিয়ে আসেন একাধিক বেসরকারি সংস্থা, কলেজপড়ুয়া ও সাধারণ মানুষ। তাঁদের সম্মিলিত অর্থসাহায্যে বুধবার সকাল থেকে শুরু হল কচুরিপানা সাফাইয়ের কাজ। ওই সংস্থাগুলির সদস্যদের আশা, দু’সপ্তাহের মধ্যে সব কচুরিপানা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তৈরি হয়ে যাবে পরিযায়ী পাখিদের বসার জন্য পানা দিয়ে তৈরি ছোট ছোট দ্বীপও। পক্ষীপ্রেমীদের আশা, এর পরে আগামী মাসে পরিযায়ী পাখি আসার ক্ষেত্রে আর সমস্যা হবে না।
কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পুরসভা পানা পরিষ্কার করল
না কেন?
হাওড়া পুরসভার কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘গত বার পুরসভার সাফাইকর্মীরা ঝিল পরিষ্কার করতে গিয়ে সব কচুরিপানা তুলে ফেলায় পাখিদের বসার জায়গা ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার তাই আমরা আর কোনও ঝুঁকি নিইনি। কারণ, পাখিদের বসার ওই ছোট দ্বীপ তৈরি করার মতো দক্ষ কর্মী পুরসভার নেই।’’
ঝিলের দুরবস্থার কথা সামনে আসার পরেই পুরসভা, রাজ্য বন্যপ্রাণ দফতর ও বন দফতরের সঙ্গে কথা বলে পানা সাফাইয়ে উদ্যোগী হয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা-সহ কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজ ও সেখানকার পড়ুয়ারা। ওই সংস্থার সম্পাদক অর্জন বসুরায় জানান, তাঁরা সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেন, বুধবার থেকেই কাজ শুরু হবে। চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অর্জনবাবুর কথায়, ‘‘কলকাতার একটি কলেজের আর্থিক সাহায্য ও সাধারণ মানুষের থেকে অর্থ নিয়ে এই কাজ হচ্ছে। হাওড়া পুরসভার তরফে ঝিলের পাড় থেকে পানা পরিষ্কারের জন্য সাফাইকর্মী ও পে লোডার দেওয়া হয়েছে। পুরকর্মীরা পাড়ে কাজ করছেন। আর ঝিলে নেমে পানা পরিষ্কার করছেন আমাদের কর্মীরা।’’
এ দিন সাঁতরাগাছি ঝিলে গিয়ে দেখা যায়, ঝিলের দক্ষিণ দিক থেকে পানা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তৈরি হচ্ছে পাখি বসার দ্বীপও। ঝিলের পাড়ে কচুরিপানা তোলার পরে পুরকর্মীরা পে লোডারে করে সেগুলি নিয়ে যাচ্ছেন। উপস্থিত রয়েছেন কলেজের পড়ুয়া ও পক্ষীপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা।
এই কাজে অর্থসাহায্য করেছে যে বেসরকারি কলেজ, তাঁদের কর্তৃপক্ষের তরফে দরজদীপ সিংহ ওয়ালিয়া বলেন, ‘‘পানা পরিষ্কার করতে রোজ ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রতি দিন কাজ করবেন ২৫-৩০ জন শ্রমিক। প্রায় তিন লক্ষ টাকা লাগবে।’’