পেটিএমে মাছ বেচে নিশ্চিন্ত দোকানদার

ধার-বাকির কারবার নেই। এই বাজারেও ‘নগদে’ মাছ বেচে মুখে চও়ড়া হাসি রমেশের! উত্তরপাড়ায় জিটি রোডের ধারে লম্বাটে ঘুপচি দোকানে বসে কারবার চালান রমেশ সাউ।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৬
Share:

উত্তরপাড়ার বাজারে।—পারমিতা মুখোপাধ্যায়।

ধার-বাকির কারবার নেই। এই বাজারেও ‘নগদে’ মাছ বেচে মুখে চও়ড়া হাসি রমেশের! উত্তরপাড়ায় জিটি রোডের ধারে লম্বাটে ঘুপচি দোকানে বসে কারবার চালান রমেশ সাউ। বুধবারও ব্যবসা মন্দ হয়নি তাঁর। কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে নগদ টাকার অভাবে যখন দেশবাসী মাথা খুঁড়ে মরছে, দোকান-বাজার সকাল থেকে ফাঁকা, তখন রমেশ জানাচ্ছেন, বুধবার সন্ধে পর্যন্ত হাজার ১২ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে তাঁর। অন্য দিনের তুলনায় প্রায় কুড়ি শতাংশ বেশি।

Advertisement

ধার-বাকিতে কাজ সারছেন বুঝি? উত্তরে রমেশ মুচকি হেসে বলেন, ‘‘এ হল পেটিএম-এর কামাল।’’

উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজের অর্থনীতির স্নাতক রমেশ পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেছেন কিছু দিন হল। এখন বয়স বছর তিরিশ। শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের যুবক ব্যবসার হাল ধরে বুঝতে পারেন, সত্তর বছরের পুরনো ব্যবসা বাড়াতে হলে বদলাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু ঠিক কোন পথে, ঠাহর করে উঠতে পারেননি। সমস্যার সমাধান করে দেয় পেটিএম।

Advertisement

রমেশ বলেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে কোনও ঝামেলা নেই। খুচরো নিয়ে খদ্দেরের সঙ্গে মন কষাকষি নেই। স্রেফ আপনার মোবাইল ওয়ালেট থেকে আমার মোবাইল ওয়ালেটে টাকা চলে আসবে। এই সুবিধা কেন নেব না? শুধু অভ্যাসের একটু বদল দরকার।’’ সেই বদলের সুবিধা যে কতখানি হতে পারে, বুধবার সকাল থেকে তা বিলক্ষণ বুঝেছেন রমেশ। যাঁকে দেখে এখন হাত কামড়াচ্ছেন পড়শি ব্যবসায়ীরাও।

রমেশ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাত ১২টার পরে যা হল বাজার জুড়ে, আমি কেন, আমার তিন পুরুষের ব্যবসা— কেউ এই জিনিস দেখেনি। কিন্তু আমাদের ব্যবসায় সকাল থেকে আঁচ পড়েনি। পরিবারের লোকজন এখন আমাকে বাহবা দিচ্ছেন।’’

পেটিএমে নগদ টাকার কারবার নেই। আবার আছেও। কী রকম?

পেটিএম ব্যবহার করতে হলে ক্রেতাকে তাঁর অ্যানড্রয়েড মোবাইলে পেটিএম অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। সেটি আদপে একটি মোবাইল ওয়ালেট। নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইলেই পেটিএম ওয়ালেটে টাকা ভরা যাবে, ঠিক যেমন মোবাইল রিচার্জ করা হয়। ক্রেতার পেটিএম ওয়ালেটে থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিক্রেতার ওয়ালেটে চলে যাবে টাকা। টাকার হাতবদল তো দূরের কথা, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড পর্যন্ত লাগবে না এই ব্যবস্থায়। মানিব্যাগ বাড়িতে ফেলে এলেও সমস্যা নেই। কলকাতার বহু হোটেল, রেস্তোরাঁ, সেক্টর ফাইভের বহু ঝুপড়ি খাবারের দোকান, এমনকী ট্যাক্সিতেও এ ভাবে টাকার লেনদেন চলছে। বাজারের ভিতরে সকালে দোকান করেন রমেশ। বিকেলে ব্যবসা চলে জিটি রোডের ধারের দোকান থেকে। উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরির গায়েই তাঁদের মাছের দোকান।

রমেশ জানান, অপরিসর জিটি রোডের উপরে এই দোকানে অনেকে গাড়ি থামিয়ে মাছ কেনেন। কিন্তু অনেক ক্রেতা বেশি টাকা সঙ্গে রাখতে চান না। তাঁরা গাড়ি দাঁড় করিয়ে খোঁজ করেন এটিএমের। গাড়ি দাঁড় করালে যানজট হয়। অনেকে এটিএম খুঁজতে গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দোকানে ফেরেন না। এই সময় পেটিএমের কথা মাথায় আসে শিক্ষিত যুবকটির। বাড়ির লোক প্রথমটায় শুনে রে রে করে উঠেছিলেন। এ ভাবে কী ব্যবসা হয়, টাকা আদৌ ব্যাঙ্কে ঢুকবে তো, মোবাইল থেকে মাছ কিনতে কেউ আসবে নাকি মফস্‌সলে— কত প্রশ্ন!

ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেন রমেশ। তাঁর অভিজ্ঞতায়, বহু ক্রেতা ইদানীং পেটিএম ব্যবহার করছেন। তাঁরাই খুঁজে নিচ্ছেন রমেশের দোকান। মুখে মুখে ছড়াচ্ছে তাঁর ব্যবসার খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন