নেই সমবায়, সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছোট শিল্পোদ্যোগীরা

শিল্প সমবায় বা ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোঅপারেটিভ’-এর কোনও অস্তিত্ব নেই। থাকলে এর সদস্যরা (যাঁদের অবশ্যই শিল্পোদ্যোগী হতে হবে) সরকারি ঋণ-সহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পেতে পারতেন। অথচ ছোট ও মাঝারি শিল্পের আঁতুড়ঘর হাওড়ায় আজ পর্যন্ত কোনও শিল্প সমবায় গড়ে ওঠেনি।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০২:২৭
Share:

শিল্প সমবায় বা ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোঅপারেটিভ’-এর কোনও অস্তিত্ব নেই। থাকলে এর সদস্যরা (যাঁদের অবশ্যই শিল্পোদ্যোগী হতে হবে) সরকারি ঋণ-সহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পেতে পারতেন। অথচ ছোট ও মাঝারি শিল্পের আঁতুড়ঘর হাওড়ায় আজ পর্যন্ত কোনও শিল্প সমবায় গড়ে ওঠেনি।

Advertisement

রাজ্য ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতরের তরফে এ জন্য কারখানা মালিকদের অনীহাকেই দায়ী করা হয়েছে। শিল্পোদ্যোগীরা পাল্টা দায় চাপিয়েছেন ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতরের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, এই দফতর বিশেষ করে তার অধীন জেলা শিল্পকেন্দ্রের উদাসীনতাই জেলায় শিল্প সমবায় গঠনে বড় অন্তরায়। যদিও নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এ ধরনের সমবায় রয়েছে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মৃৎশিল্পীদের সমবায় রয়েছে। সমবায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটির বাজি শিল্পীদেরও।

“জেলা শিল্পকেন্দ্র এবং ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি
সমবায় রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য। সমবায়টি গঠিত হলে জরিশিল্পীরা অনেক উপকৃত হতেন।”
—মুজিবর রহমান, সারা ভারত জরিশিল্পী সমিতির সভাপতি

Advertisement

সমবায় গঠিত হলে সদস্যরা তাঁদের কারখানার জন্য এখান থেকে ঋণ পাবেন। ঋণের উপরে ভরতুকি দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর সমবায়ের শেয়ার কিনতে পারবেন। তাতে সমবায়গুলির হাতে নগদ টাকার জোগান আসবে। বড়গাছিয়া এবং আমতায় ছোট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, হাঁটালে তালা তৈরি, উলুবেড়িয়ায় ব্যাডমিন্টনের কর্ক তৈরি, ডোমজুড়ে বস্ত্র কারখানা, মুন্সিরহাটে চশমার কাচ তৈরির পাশাপাশি জেলা জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় জরি শিল্প গড়ে উঠলেও সেখানে শিল্প সমবায়ের কোনও অস্তিত্ব নেই। এইসব এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, শিল্পী বা কারখানা মালিকেরা এ ধরনের সমবায়ের কথা জানেনই না। দু’একটি ক্ষেত্রে আবার সমবায় গঠনের পরিকল্পনা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

বছরখানেক আগে উদয়নারায়ণপুরে জরিশিল্পীদের নিয়ে সমবায় গঠনের উদ্যোগ পরিণতি লাভ করেনি। একইভাবে সাঁকরাইলে জরিশিল্পীদের সমবায় তৈরির পরিকল্পনা হলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করার পরেও চালু হয়নি জরি হাব। কারণ প্রস্তাবিত সমবায়ের হাতেই জরি হাবটির দায়িত্ব তুলে দেওয়ার কথা। উদয়নারায়ণপুরে জরিশিল্প সমবায় গঠন করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ৫৮ জন মহিলা শিল্পী। হাওড়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে প্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্ট খুলে সমবায় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবটি তাঁরা জেলা শিল্পকেন্দ্রের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতরে। এখনও তা রেজিস্ট্রি হয়নি।

সমবায় গঠনে উদ্যোগী হয়েছে সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের সভাপতি মুজিবর রহমান মল্লিক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শীতলচন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা জেলা শিল্পকেন্দ্র এবং ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি সমবায় রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য। সমবায়টি গঠিত হলে জরিশিল্পীরা অনেক উপকৃত হতেন।’’

ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই সমবায় সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন হাওড়া জেলা শিল্পকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। সেগুলির উত্তর আসেনি। ফলে পরবর্তী কাজ করা যাচ্ছে না।

জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার অশোক সিংহ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘জরুরি বৈঠকে ব্যস্ত। এখন কথা বলা যাবে না।’’ সাঁকরাইলে অবশ্য সমবায় গঠনের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে বলে ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতর থেকে জানানো হয়েছে।

তবে রাজ্য ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতর এবং জেলার বিভিন্ন শিল্পোদ্যোগীদের মতে সমবায়কে একটা আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন মহল থেকে এর জন্য প্রচার এবং উদ্যোগের প্রয়োজন আছে। তা করা হলেই সমবায় গঠন সম্ভব। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই সমবায় আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েছে। শিল্প সমবায় গঠনে উদ্যোগহীনতা তারই পরোক্ষ ফল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন