সাহায্যে এলেন অপরিচিতেরা

‘বোঝা’ মাকে রাস্তায় ফেলে পালাল ছেলে

আসার কথা ছিল ছেলের। কিন্তু ছেলে আসেনি। বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কোন্নগরের নবগ্রামে ওই ভাবেই বসে ছিলেন ৭৫ বছরের রেণুবালা দে।

Advertisement

তাপস ঘোষ

রিষড়া শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৪
Share:

অসহায়: রিষড়ার সেই বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র

ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে একটি ক্লাবের মাঠের পাশে একচিলতে ছাউনির নীচে বসে তিনি কাঁদছিলেন। বিড়বিড় করছিলেন, ‘‘কেউ এসো বাবা। আর পারছি না।’’

Advertisement

আসার কথা ছিল ছেলের। কিন্তু ছেলে আসেনি। বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কোন্নগরের নবগ্রামে ওই ভাবেই বসে ছিলেন ৭৫ বছরের রেণুবালা দে। রিষড়ার বারুজীবী এলাকায় ভাড়াবাড়িতে তাঁর ফেরার সুযোগ ছিল না। কারণ, চাবি নিয়ে গিয়েছিল ছেলে। শেষমেশ সাহায্যে এগিয়ে আসেন স্থানীয়েরা। বৃদ্ধার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় নবগ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বারান্দায়। বৃদ্ধার আফশোস, ‘‘বুড়ো হয়েছি। তাই ছেলের বোঝা হয়ে গিয়েছি। তাই ছেলে এ ভাবে ফেলে পালাল।’’

কী হয়েছিল বুধবার?

Advertisement

বৃদ্ধা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। ছেলে বাপি ও পুত্রবধূ রত্নাকে নিয়ে তাঁর সংসার। ছেলে টোটো চালায়। নতুন ভাড়াবাড়ি খোঁজার কথা বলে সে বুধবার দুপুরে মাকে টোটো করে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। তার পরে নবগ্রামের ওই ক্লাবের পাশে বসিয়ে রেখে চলে যায়। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘ছেলে বলেছিল, নতুন বাড়ি দেখে এসে আমাকে নিয়ে যাবে। বলেছিল, মা তুমি এখানেই বসে থাকবে। কিন্তু ও আর ফিরে এল না। আমাকে ফেলে পালাল।’’

বুধবার সন্ধ্যায় নবগ্রামের কিছু বাসিন্দা বৃদ্ধাকে প্রথমে স্থানীয় একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে রাখেন। জল ও খাবার এনে দেন। সেখানেই রাত কাটান রেণুবালাদেবী। পরের দিনের খাবার হিসেবে মেলে অঙ্গনওয়াড়ির মিড-ডে মিল। অঙ্গনওয়াড়ির বারান্দাতেই তাঁর আশ্রয় হয়। মশার কামড় থেকে বৃদ্ধাকে বাঁচাতে বিছানার সঙ্গে একটি মশারিরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

শুক্রবার দুপুরে জেলা পরিষদের নবগ্রাম এলাকার সদস্য দীপ্তি ভট্টাচার্য ঘটনার কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে এসে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলেন। তারপর তিনি উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষালকেও বৃদ্ধার অবস্থার কথা জানান। প্রবীরবাবু অসহায় বৃদ্ধাকে আজ, শনিবার একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন।

এর মধ্যে বাপির খোঁজ করতে বারুজীবী এলাকা চষে ফেলেছেন নবগ্রামের ওই বাসিন্দারা। কিন্তু বাপির দেখা মেলেনি। বিভাস চৌধুরী নামে তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘গিয়ে দেখি রেণুবালাদেবীর বাড়িতে তালা ঝুলছে। বাপির স্ত্রীরও সন্ধান মেলেনি। মনে হয় দু’জনে একসঙ্গে চম্পট দিয়েছে।’’ জেলা পরিষদের সদস্য দীপ্তিদেবী বলেন, ‘‘বৃদ্ধার ছেলের উপযুক্ত শাস্তির প্রয়োজন।’’

অপরিচিতদের থেকে তিনি আশ্রয় পেয়েছেন। খাবার পেয়েছেন। তবু চোখের জল যাচ্ছে না রেণুবালাদেবীর, ‘‘আমি শেষে ছেলের বোঝা হয়ে গেলাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন