শব্দ-দানবের দাপট কম, স্বস্তি উলুবেড়িয়ায় 

অন্যান্য বছর কালীপুজোয় সন্ধের পর থেকে শব্দবাজির দাপটে কানপাতা দায় হতো গ্রামীণ হাওড়ায়। থানায় থানায় ঘনঘন ফোন বাজত।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৭
Share:

শব্দবাজি ফেটেছে, তবে অনেক কম। মণ্ডপগুলিতেও ছিল না ডিজে-র কানফাটা শব্দ। অনেক জায়গাতেই মাইকে বেজেছে শ্যামাসঙ্গীত বা ভক্তিগীতি! এ বার এক ব্যতিক্রমী কালীপুজোর রাত দেখল গ্রামীণ হাওড়া। স্বস্তি পেলেন বহু মানুষ। পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি, এর পিছনে রয়েছে লাগাতার প্রচার। অবশ্য সাধারণ মানুষের সচেতনতা বেড়েছে বলেও মনে করছে তারা।

Advertisement

অন্যান্য বছর কালীপুজোয় সন্ধের পর থেকে শব্দবাজির দাপটে কানপাতা দায় হতো গ্রামীণ হাওড়ায়। থানায় থানায় ঘনঘন ফোন বাজত। শব্দবাজি যাঁরা ফাটাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে পুলিশের ‘চোর-পুলিশ খেলা’ চলত। কিন্তু এ বার সেই ছবি কার্যত উধাও। পুলিশকর্তাদের অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, রাত বাড়লে শব্দবাজির দাপটও বাড়বে। কিন্তু সেই আশঙ্কা সত্যি হয়নি। উলুবেড়িয়া, বাগনান, শ্যামপুর, পাঁচলা, ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর, সাঁকরাইল— সর্বত্রই মাঝেমধ্যে শব্দবাজির আওয়াজ শোনা গেলেও দাপট ছিল কম। শব্দবাজির বদলে আতসবাজি জ্বাল‌িয়ে মানুষ উপভোগ করেছেন দীপাবলির আনন্দ।

হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের লাগাতার অভিযান এবং প্রচারের কিছুটা অবদান হয়তো আছে। তবে মানুষ নিজেরাই যে ক্রমশ পরিবেশ সচেতন হচ্ছেন, হাওড়ার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে।’’ একই সুরে ‘মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি’র কর্তারাও বলেন, ‘‘আমরা যখন প্রচার করছিলাম, বহু মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। বোঝা যাচ্ছে ধীরে ধীরে শব্দবাজির মন্দের দিক মানুষ নিজেরাই বুঝে নিতে চাইছেন।’’

Advertisement

এটা ঘটনা, অন্যান্য বারের চেয়ে এ বার পুলিশ অনেক আগে শব্দবাজি উদ্ধারে অভিযান এবং প্রচারে জোর দিয়েছে। উলুবেড়িয়ার মালপাড়ায় লুকিয়ে-চুরিয়ে শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে ঠিকই, তবে পুলিশের হানাদারির জন্য বিক্রিতে ভাটা পড়ে। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, বাজারে শব্দবাজি যাতে ঢুকতে না-পারে, সে জন্য পুলিশ চেষ্টার ত্রুটি করেনি। ডিজে-র বিরুদ্ধেও পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছিল। দুর্গাপুজোর বিসর্জনের সময়ে ডিজে বেজেছিল উদ্দাম ভাবে। তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এ বারে অনুমতি নিতে আসা কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ডিজে না-বাজানোর মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

শব্দবাজি ও ডিজে-র বিরুদ্ধে প্রচারও কম হয়নি। শ্যামপুরে বিশাল পদযাত্রা হয়। ডোমজুড়-জগৎবল্লভপুরেও পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার চলে। জয়পুরে ক্লাবগুলির সঙ্গে বৈঠক করে পুলিশ। ছিল বেসরকারি উদ্যোগও। উলুবেড়িয়ার মহিষরেখায় ‘মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি’র পক্ষ থেকে আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়। ছোট ছেলেমেয়েরা শব্দবাজি ব্যবহারের বিরুদ্ধে স্লোগান লেখে।

সকলেই চান, কালীপুজোর রাতের এই ছবিটাই স্থায়ী হোক আগামী বছরগুলিতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন