ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা যাতে নিজেরাই নানান প্রয়োজনীয় কৃষিযন্ত্র কিনতে পারেন, সেই লক্ষে দু’টি পৃথক প্রকল্পে ৫০ শতাংশ ভর্তুকির (ট্রাকটরের ক্ষেত্রে শুধু ৩৫ শতাংশ) ব্যবস্থা করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। প্রকল্প দু’টি হল— ওটিএএসএফআই এবং এফএসএসএফএম। এর পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার আরও বাড়াতে এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের হাতে সহজে আধুনিক কৃষিযন্ত্র পৌঁছে দিতে হুগলিতে ‘কাস্টম হায়ারিং সেন্টার’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে কৃষি দফতর। তবে ‘কাস্টম হায়ারিং সেন্টার’ নামে প্রকল্পটি দু’বছর ধরে চলছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৪২টি কেন্দ্র গড়ে সেগুলি থেকে কম ভাড়ায় কৃষিযন্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে চাষিদের। জেলা কৃষি আধিকারিক অশোক তরফদার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতগুলিকেও প্রচার করতে বলা হয়েছে। আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ ব্লকে কৃষি আধিকারিকের কাছে আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। যাঁদের আবেদনপত্র আগে মিলবে তাঁদের আগে কৃষিযন্ত্র দেওয়া হবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে ছোট যন্ত্রপাতি (ওটিএএসএফআই) এবং বড় যন্ত্রপাতি(এফএসএসএফএম) দেওয়ার এই দু’টি পৃথক প্রকল্প নতুন নয়। গত বছরেও কীটনাশক ছড়ানোর জন্য কয়েকটি স্প্রে-মেশিন দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই সুযোগ আরও বাড়ানো হয়েছে। ছোট যন্ত্রপাতির মধ্যে ধান ঝাড়া, বীজ বপনের জন্য ড্রামসিডার, বীজ শোধনের যন্ত্র থেকে শুরু করে কাস্তে, কোদাল ইত্যাদি যাবতীয় কৃষিযন্ত্রের জন্য মোট মূল্যের ৫০ শতাংশ অনুদান দেওয়া হবে। আর বড় যন্ত্রের ক্ষেত্রে (শুধু ২০ হর্স পাওয়ার থেকে ৪০ হর্স পাওয়ার) ট্রাক্টরের জন্য ৩৫ শতাংশ অনুদান। বাকি পাওয়ার টিলার, ধান রোপণের যন্ত্র, পাম্পসেট, আলু বসানোর যন্ত্র ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই ৫০ শতাংশ অনুদান। বড় যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে কৃষকদের কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। ছোট যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে সেভিংস এ্যাকাউন্ট থাকলেও হবে। তবে তাঁদের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রধানের শংসাপত্র জমা দিতে হবে।
তবে কৃষি যন্ত্রের প্রয়োগ নিয়ে কেন এত তোড়জোড়? জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, রাজ্যে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার গড়ে ৪০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ। নানা কৃষি উপকরণের দাম ক্রমবর্ধমান। শ্রমিক সমস্যা তো রয়েছে। এ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের অভাব রয়েছে। অথচ কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়লে চাষের প্রতিটি স্তরে ১৫-২০ শতাংশ নিশ্চিতভাবেই সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে জেলা কৃষি দফতর। সময় কমবে অন্তত ৩০ শতাংশ। সব মিলিয়ে শ্রমের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি খরচ কমিয়ে উন্নত ফসল ফলানো সম্ভব হবে।