উলুবেড়িয়ায় উদ্ধার মুণ্ডুহীন দেহ শনাক্ত

জমি সিন্ডিকেটেই খুন, বলছে পুলিশ

জমি কেনাবেচার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়াতেই কি খুন হয়েছেন ডোমজুড় থানার বাঁকড়া এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ হালিম (২৬)? পুলিশের তদন্তে অন্তত এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৮:০৪
Share:

নিহত মহম্মদ হালিম।

জমি কেনাবেচার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়াতেই কি খুন হয়েছেন ডোমজুড় থানার বাঁকড়া এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ হালিম (২৬)? পুলিশের তদন্তে অন্তত এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার সকালে উলুবেড়িয়ায় মুম্বই রোডের ধারে বেলেসিজবেড়িয়া এলাকায় মুণ্ডুহীন অবস্থায় এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের সময়ে ধড় পড়েছিল এক জায়গায়, মুণ্ডু অন্য জায়গায়। দু’টিই ছিল বস্তাবন্দি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ খুনের ঘটনা বললেও দেহ শনাক্ত করতে পারেনি। সংবাদপত্রে দেহ উদ্ধারের খবর পড়ে শনিবার সকালে উলুবেড়িয়া থানায় এসে পোশাক দেখে হালিমের দেহ শনাক্ত করেন তাঁর আত্মীয়েরা। নিহতের ভাই মহম্মদ আলিম তাঁর ভাইকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘পরিবারিক দর্জির কাজ নিয়ে ভাই ভালই ছিল। ফাটকা রোজগারের নেশায় জমি সিন্ডিকেটের পাল্লায় পড়েই খুন হতে হল।’’

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছেন, জমিজমা সংক্রান্ত গণ্ডগোলেরই এই খুন। বাঁকড়া ৩ পঞ্চায়েত এলাকার বেনেবনের বাসিন্দা হালিম দর্জির কাজ করতেন। দু’বছর আগে তিনি একটি জমি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেই সিন্ডিকেটের কাজ ছিল, প্রোমোটারদের হাতে বিতর্কিত জমির দখল তুলে দেওয়া। এই কাজ করে ভালই রোজগার বেড়েছিল হালিমের। কয়েক বছর আগে দর্জির কাজ ছেড়ে দেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাই তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল। হালিমের স্ত্রী মারুফা বলেন, ‘‘ও ধীরে ধীরে জমির কারবার থেকে সরে আসতে চাইছিল। কিন্তু সিন্ডিকেটের চাঁইরা ওকে আর ফিরতে দিল না।’’

Advertisement

হালিমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ হালিম তার এক বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা মারছিল। সেই বন্ধু তাঁদের জানিয়েছেন, একটি ফোন পেয়ে আড্ডা থেকে হালিম চলে যায়। তার পর আর বাড়ি ফেরেনি। ওই রাতেই তাঁরা ডোমজুড় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে যান। পুলিশ তাঁদের সব আত্মীয়ের বাড়ি খুঁজে দেখতে পরামর্শ দেয়। কিন্তু সব জায়গায় খুঁজেও হালিমের খোঁজ না পেয়ে তাঁরা নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, সম্প্রতি জগাছার উনসানিতে ২৬ কাঠা জমি প্রোমোটারকে পাইয়ে দেওয়ার বরাত পেয়েছিল হালিমের দলবল। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই জমির মধ্যে ৪ কাঠা জমি স্থানীয় একটি পরিবার দখল করে রেখেছে। জমির বাকি অংশও সেই পরিবার দখল করতে চাইছে বলে অভিযোগ। এই কাজে তাঁদের সাহায্য করছিল স্থানীয় একটি ক্লাব। দিন পনেরো আগে হালিমদের সিন্ডিকেট ওই জমির দখল নিতে গেলে ওই পরিবার এবং ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সেই সময় হালিম গুলি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। হালিম-সহ সিন্ডিকেটের চার জনের বিরুদ্ধে এফআইআরও হয়। দু’জন গ্রেফতার হলেও হালিম-সহ বাকিদের পুলিশ ধরতে পারেনি। ওই সংঘর্ষের জেরেই এই খুন কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, তদন্তের কাজ শেষ হলেই সব তথ্য জানা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন