হাওড়ার নানা প্রান্ত থেকে অনিয়মের নালিশ
cyclone amphan

ক্ষতিগ্রস্ত-তালিকা যাচাইয়ে টাস্ক ফোর্স

ঝড়ের পরেই বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি গিয়েছে পুলিশ। পুলিশকেও প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। সেই কারণে তদন্তে সহায়তার জন্য টাস্ক ফোর্সে পুলিশকেও রাখা হয়েছে।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২০ ০০:০১
Share:

ফাইল চিত্র

সাঁকরাইল-সহ হাওড়ার নানা জায়গা থেকে আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিতে বেনিয়মের অভিযোগ পাচ্ছে জেলা প্রশাসন। তাই সেই তালিকা যাচাই করতে জেলার ১৪টি ব্লকেই টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দিলেন জেলাশাসক। শুক্রবারই ওই নির্দেশ জারি হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, টাস্ক ফোর্সের মাথায় থাকবেন বিডিও। সদস্যদের মধ্যে থাকবেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি/আইসি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিধায়কের প্রতিনিধি এবং বিডিও যদি কাউকে রাখার কথা বিবেচনা করেন, সেই ব্যক্তি। ঝড়ের পরেই বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি গিয়েছে পুলিশ। পুলিশকেও প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। সেই কারণে তদন্তে সহায়তার জন্য টাস্ক ফোর্সে পুলিশকেও রাখা হয়েছে।

Advertisement

তবে, জেলাশাসক মুক্তা আর্য এই টাস্ক ফোর্সকে নতুন কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে টাস্ক ফোর্স গঠন করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করাই নিয়ম। আমপানের পরে হাওড়াতেও গোড়া থেকে এ ভাবেই কাজ হচ্ছে। এখন সেটা লিখিত নির্দেশ আকারে জানানো হল।’’

জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিতে স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে সাঁকরাইল ব্লককে কেন্দ্র করে। তারপরে আরও কয়েকটি এলাকা থেকে একই অভিযোগ উঠতে থাকে। সাঁকরাইল ব্লকে ১১২৯ জ‌নের নামের তালিকা তৈরি করা হয়। দেখা যায়, বাড়ি অটুট থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির একাধিক সদস্য, কর্মাধ্যক্ষ, গ্রাম পঞ্চায়েতের পদাধিকারীদের অনেকেরই। রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির একাধিক বিজেপি সদস্যের নামও! অথচ, তালিকায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের নাম ওঠেনি। এ নিয়ে কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লক সরব হয়। শোরগোল ওঠে শাসকদলের অন্দরেও। মন্ত্রী তথা জেলা (সদর) তৃণমূল সভাপতি অরূপ রায় জেলাশাসককে অভিযোগের তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
তৃণমূলের একটি অংশ থেকে তালিকা তৈরিতে স্বজনপোষণ ও গাফিলতির জন্য দায়ী করা হয় বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে সম্প্রতি বিডিওর কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। জেলাশাসক বলেন, ‘‘এটা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’’ বিডিও সন্দীপ মিশ্র বলেন, ‘‘এই ধরনের কিছুই ঘটেনি।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘তালিকা একটা করা হয়েছিল বটে, তবে ওটা চূড়ান্ত নয়। তা সংশোধন হচ্ছে।’’

Advertisement

টাস্ক ফোর্স আগে থেকেই কাজ করছিল বলে জেলাশাসক দাবি করলেও তা মানতে চায়নি ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেস। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘টাস্ক ফোর্স আগে থেকে কাজ করলে এত গোঁজামিলে ভরা তালিকা তৈরি হল কী ভাবে? তার ভিত্তিতে টাকাই বা বিলি হয়ে গেল কেন? আসলে কোনও টাস্ক ফোর্সই ছিল না। ঘরে বসে শাসকদল তালিকা বানিয়েছে। টাকা বিলি হয়ে যাওয়ার পরে টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটা চোখে ধুলো দেওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।’’ একই মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেতা অলোক কোলে।

বিরোধীদের অভিযোগ মানতে চায়নি শাসকদল। টাস্ক ফোর্স গঠনকে ত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা হিসেবে দেখছে তারা। তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তড়িঘড়ি তালিকা তৈরিতে কিছু ভুলচুক হয়েছিল। তাই সেই ত্রুটি সংশোধন হচ্ছে। তালিকায় স্বচ্ছতা আনতেই এটা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। বিরোধীরা সব কিছুতেই নির্বাচনের ভূত দেখেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন