হাসপাতালে তারিফ। —নিজস্ব চিত্র
জন্মের পরেই ধরা পড়েছিল হৃৎপিণ্ডের একটি ভালভ ফুটো। পরে বড় হয়ে একটু ছুটলেই হাঁফিয়ে যেত একরত্তি ছেলেটা। জন্মের সময়েই চিকিৎসকরা অবিলম্বে শিশুটির হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার জরুরি বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরিবারের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায় টাকা।
হুগলির উত্তরপাড়ার ধাড়সা দিদার বক্স ইউপি মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তারিফের পাশে শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছেন তার শিক্ষকেরা। তাঁদেরই প্রচেষ্টায় নতুন জীবন পেতে চলেছে সে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় ‘শিশু সাথী’ প্রকল্পে তারিফের হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের জন্য রবিবারই তাকে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
স্কুল লাগোয়া বস্তির একটি ঘরে তিন মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে দিনমজুর মহম্মদ ফিরোজের অভাবের সংসার। স্ত্রী খুরশিদাবানু পরিচারিকার কাজ করেন। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাকি দুই মেয়ে কোতরং আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। মা-বাবা দু’জনেই বলেন, ‘‘নিজেরা পড়াশোনা শিখিনি। তাই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চেয়েছি।’’ মা খুরশিদাবানুর কথায়, ‘‘ছেলের অসুস্থতার কথা আগেই স্কুলের স্যারদের জানিয়েছিলাম। টাকার জন্য যে অপারেশন করাতে পারিনি তাও জানাই। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকদের চেষ্টাতেই ছেলের অপারেশনের ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা তো সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানি না। ওঁরাই সব করছেন। সাজিদ স্যার ওর জন্য যা করছেন তা ভোলার নয়।’’
কী ভাবে ব্যবস্থা হল অপারেশনের?
২০১৩ সালে চালু হওয়া শিশু সাথী প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকার প্রতি বছরে সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। তারই সূত্রে বছর খানেক আগে ধাড়সা দিদার বক্স প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যশিবির হয়। তখনই শিক্ষকরা তারিফের হৃৎপিণ্ডের ভালভে ফুটো থাকার কথা চিকিৎসকদের জানান। তার পরেই শুরু হয়ে যায় তারিফের অস্ত্রোপচারের তোড়জোড়। রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্যক্রমের উত্তরপাড়া-কোন্নগর শাখার মেডিক্যাল অফিসার অমৃতা ঘোষ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি শিক্ষকদের যে আরও বড় ভূমিকা রয়েছে তা এঁরা দেখিয়ে দিলেন।’’ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিআই মুনমুন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষাদানের পাশাপাশি শিক্ষকদের সমাজসেবার ভূমিকাও থাকে। ধাড়সা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেটাই করে দেখিয়েছেন। আমরা ওই বিদ্যালয়কে পুরস্কৃত করব।’’ উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘দুঃস্থ পড়ুয়ার পাশে যে ভাবে এই স্কুলের শিক্ষকেরা দাঁড়ালেন, তা অন্য স্কুলের মডেল হওয়া উচিত।’’