বিতর্কিত: এই দেওয়াল লিখন নিয়েই ঝামেলা। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের ভিতর প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে দেওয়ালে দেওয়ালে স্লোগান লিখেছেন শিক্ষকেরা। সে সব লিখন মুছে যাওয়ার কথা সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় স্কুল ভবন রং করার পরই। কিন্তু অভিযোগ, শিক্ষকেরা ওই সব লিখন কিছুতেই মুছতে দিচ্ছেন না। তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে রং করার প্রক্রিয়াই।
আরামবাগের নৈসরাই হাইস্কুলের ঘটনা। স্কুল রং করার কর্মসূচি সম্পূর্ণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ব্লকের প্রায় সব স্কুলেই রঙের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। ওই স্কুলেও কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা শেষ হয়নি।’’ বিশাখবাবুর দাবি, স্কুল পরিদর্শকের তরফে তাঁকে জানানো হয়েছে যে স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই ওই কাজ আটকে গিয়েছে। তারপর থেকে আবার নতুন করে কাজ শুরু করার প্রস্তাবও আসছে না তাঁর কাছে।
জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্র কোনারের সঙ্গে অন্য শিক্ষকদের বিবাদ চলছে। ২০১৩ সাল থেকে দুর্নীতি এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করাও হয়েছে। প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, স্কুলে আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে এবং রাজনৈতিক খবরদারির রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়াতেই তাঁকে হেনস্থা হতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০১৫ সালে তিনি থানায় অভিযোগ করেন, পরিচালন সমিতি ও কিছু শিক্ষকের মদতে বহিরাগতরা এসে তাঁকে মারধর করে গিয়েছে। তারপরই শিক্ষকদের অনেকে দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে দিয়েছেন— ‘প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চাই’।
স্কুল পরিদর্শক চিরঞ্জিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দেওয়াল লিখন মোছা যাবে না জানিয়ে কিছু শিক্ষক আপত্তি তোলেন। স্কুল পরিচালন সমিতির সঙ্গে বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা।’’
স্কুল রং করা প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্রনাথ কোনার বলেন, ‘‘রং করার কাজ শুরু হয়েছিল এ বছর মার্চ মাসের শেষে। ঠিকাদাররা ওই সব অশালীন লিখনের উপরে রং করতে গেলে তাঁদের বাধা দেন কয়েকজন শিক্ষক। আমি ব্লক প্রশাসন ও স্কুল পরিদর্শককে সে কথা জানিয়েছিলাম। তারপরই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
স্কুল শিক্ষকদের পক্ষে শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ দাবি করেছেন, “বাধা দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। দেওয়ালে দু’একটি জায়গায় লেখালেখি রয়ে গিয়েছে। তার বাইরে প্রায় সর্বত্র রং করা হয়ে গিয়েছে।’’
শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি বিকাশ গুপ্ত অবশ্য বলেন, “শিক্ষকরা দেওয়াল লিখন মুছতে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু মাস খানেক আগেই তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছে, স্কুলে এ সব চলবে না। তারপর থেকে তাঁরা আর কোনও বাধা দেননি। এখন প্রধান শিক্ষক নিজেই পুরনো গল্প নিয়ে কাজ করাতে চাইছেন না।’’
তবে এ সব ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরাও। তাঁদের দাবি, গত তিন বছর ধরে নানা রকমের ক্ষোভ বিক্ষোভ চলছেই স্কুলের ভিতর। শিক্ষকদের আকচা-আকচিতে হামেশাই বন্ধ হয়ে যায় পঠনপাঠন।