দু’মাস পরে গ্রেফতার প্রেমিক-সহ ১০ জন

বিক্রি হওয়া কিশোরী উদ্ধার  

দু’মাস আগে মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ছাত্রীটি। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের একটি যৌনপল্লি থেকে বৃহস্পতিবার তাকে উদ্ধার করে আনল উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে নারী পাচার চক্রের পাঁচ মহিলা-সহ ১০ জনকে।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০২:১৯
Share:

ধৃত: অভিযুক্তদের উলুবেড়িয়া থানায় নিয়ে আসছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

মোবাইলে আলাপ গড়িয়েছিল প্রেমে! ‘প্রেমিক’-এর থেকে মিলেছিল বিয়ের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু শেষমেশ চক্রান্তের শিকার হতে হল উলুবেড়িয়ার অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে।

Advertisement

দু’মাস আগে মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ছাত্রীটি। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের একটি যৌনপল্লি থেকে বৃহস্পতিবার তাকে উদ্ধার করে আনল উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে নারী পাচার চক্রের পাঁচ মহিলা-সহ ১০ জনকে। তাদের মধ্যে এক দম্পতি এবং ছাত্রীর ‘প্রেমিক’ শেখ সরিফুলও রয়েছে। ওই তিন জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমার বাসিন্দা। বাকিরা মেরঠের।

তদন্তকারীদের দাবি, দু’মাসে গাজিয়াবাদের বিভিন্ন যৌনপল্লিতে মেয়েটিকে মোটা টাকার বিনিময়ে অন্তত ১২ বার বিক্রি করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে সেখানকার একটি যৌনপল্লির পান্ডা ভারতী শর্মাও রয়েছে। প্রথম বার তার কাছেই ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার ওই ছাত্রীকে বিক্রি করা হয়েছিল। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা, জানার চেষ্টা চলছে।

Advertisement

দু’মাস পরে চেনা বৃত্তে ফিরে মেয়েটি বলে, ‘‘ওকে বিশ্বাস করাটাই আমার কাল হল। ও যে আমাকে ঠকাবে ভাবতে পারিনি। হাসপাতাল থেকে ও আমাকে নিয়ে গিয়েছিল বিয়ে করবে বলে।’’ মেয়েকে ফিরে পেয়ে স্বস্তি পেয়েছেন মা। তিনি বলেন, ‘‘আমি খুশি। দোষীদের শাস্তি হোক। আমি মেয়েকে আবার স্কুলে পাঠাব। ও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক।’’

কী হয়েছিল দু’মাস আগে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ মে ছাত্রীটি মায়ের সঙ্গে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে গিয়ে সেখান থেকেই নিখোঁজ হয়। তার মা থানায় জানান। তদন্তে নেমে পুলিশ মোবাইলের সূত্রে মেয়েটির ‘প্রেমিক’, ক্যানিংয়ের বাসিন্দা শেখ সরিফুলের খোঁজ পায়। কিন্তু ক্যানিংয়ে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সরিফুল কর্মসূত্রে তামিলনাডু চলে গিয়েছে। পুলিশ ওই রাজ্যে হানা দিয়ে দিন দশেক আগে সরিফুলকে ধরে। তাকে জেরা করে জানা যায়, সে ছাত্রীটিকে প্রথমে ক্যানিংয়ে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখে। তারপর বাসন্তীর দম্পতি বাবলু মোল্লা এবং তার স্ত্রী আজমিরার কাছে দু’দিনের জন্য রাখে। এর পরে তিন জনে ছাত্রীটিকে নিয়ে গাজিয়াবাদ রওনা হয়। ভারতীর কাছে তাকে বিক্রি করে সরিফুল তামিলনাড়ুতে এবং বাবলুরা ক্যানিংয়ে ফিরে আসে। কয়েকদিন পরে ছাত্রীটিকে ৭৫ হাজার টাকায় অন্য একটি যৌনপল্লিতে বিক্রি
করা হয়।

জেরায় এ সব কথা জানার পরে উলুবেড়িয়া থানার সাব-ইনস্পেক্টর পিয়ালি ঘোষ ছ’জনের দল গড়ে অভিযুক্ত সরিফুল এবং বাবলু ও আজমিরাকে নিয়ে গাজিয়াবাদে রওনা দেন গত রবিবার। তার পরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হানা দেন গাজিয়াবাদের যৌনপল্লিতে। খোঁজ মেলে ছাত্রীটির। ধৃতদের আজ, শুক্রবার উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন