কাটমানি-বিতর্কে হুগলিতে ধাক্কা কেন্দ্রীয় প্রকল্পে

লোকসভা ভোট মিটে গিয়েছে দেড় মাসেরও বেশি আগে। কিন্তু জেলার পঞ্চায়েতগুলিতে এখনও সে ভাবে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হল না। কাজের দাবিতে শ্রমিকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে। কিন্তু কবে থেকে পুরোদমে কাজ চালু হবে, তা নিয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারছে না প্রশাসন।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৫৭
Share:

কাটমানি-বিতর্কে হুগলিতে ধাক্কা খাচ্ছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পও!

Advertisement

লোকসভা ভোট মিটে গিয়েছে দেড় মাসেরও বেশি আগে। কিন্তু জেলার পঞ্চায়েতগুলিতে এখনও সে ভাবে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হল না। কাজের দাবিতে শ্রমিকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে। কিন্তু কবে থেকে পুরোদমে কাজ চালু হবে, তা নিয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারছে না প্রশাসন।

ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে নতুন সফ‌্টওয়্যার (সিকিওর) চালু হয়েছে। কাজের মাপ অনুযায়ী মজুরি প্রদানেরও নির্দেশ এসেছে। ফলে, নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হতে সকলের কিছুটা সময় লাগছে। তবে, তার চেয়েও বেশি দুশ্চিন্তার হয়ে দাঁড়িয়েছে সুপারভাইজারদের একটা বড় অংশের কাজে অনীহা। তাঁদের অনেকে আবার বেপাত্তা। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। বর্তমান সুপারভাইজারদের বরখাস্ত করে বিজেপির লোকদের ওই পদে নিয়োগের দাবিও উঠছে। পঞ্চায়েত প্রধানদের অনেকেও জানিয়েছেন, সুপারভাইজার পাল্টানোর দাবিকে কেন্দ্র করে এখনও ওই প্রকল্পে তাঁরা কাজ শুরু করতে পারেননি।

Advertisement

জেলা প্রশাসন থেকে অবশ্য দ্রত সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের এক জেলা আধিকারিক বলেন, “সুপারভাইজারদের বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত এবং উপভোক্তার কমিটিকে বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অবিলম্বে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। আমরা চাই না ঘনঘন সুপারভাইজার পাল্টানো হোক। বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া ওই কাজ সম্ভব নয়।”

কিন্তু বিডিওরা পঞ্চায়েতে গিয়ে ঘনঘন বৈঠক করেও সুরাহা হয়নি। বিডিওদের অভিযোগ, প্রকল্পের নতুন সফটওয়্যার রপ্ত করতে সময় লাগবে না। কাজের মাপ অনুযায়ী মজুরি প্রদানের বিষয়টিতেও শ্রমিকেরা অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। সমস্যা থেকে যাচ্ছে সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তাঁদের বরখাস্তের দাবি নিয়ে। আতঙ্কিত সুপারভাইজাররা অধিকাংশই বেপাত্তা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরে ১০০ দিনের কাজ সবচেয়ে বেশি হয় এপ্রিল থেকে জুন মাস বা বর্ষার আগে পর্যন্ত। অন্য বছরে এই সময়ে ব্লকগুলিতে ২০০ থেকে ৪৫০টি প্রকল্পের কাজ হয়। এ বার ব্লকগুলি তার ধারে-কাছে পৌঁছতে পারেনি। কোথাও ৩টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। কোথাও সর্বোচ্চ ২৫টি। এ বার অবশ্য নির্মাণ সহায়কেরা লোকসভা ভোটের কাজে যুক্ত থাকায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প সেই সময়ে হোঁচট খেয়েছে। তারপরে যখন কাজে গতি আসার কথা তখন সামনে আসে কাটমানি-বিতর্ক।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানি নেওয়া ঠেকাতে কড়া বার্তা দেওয়ার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে হইচই, অশান্তি চলছে। হুগলির গ্রামগঞ্জে কাটমানি নিয়ে যে সব অশান্তি হচ্ছে, তার অধিকাংশই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের সুপারভাইজারদের কেন্দ্র করে। ওই সুপারভাইজাররা অধিকাংশই স্থানীয় তৃণমূল নেতা কিংবা সক্রিয় কর্মী। খানাকুল, আরামবাগ, গোঘাট, পুরশুড়া, তারকেশ্বর, হরিপাল ইত্যাদি ব্লক এলাকার ওই প্রকল্পের শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের কারও কাজ হয়েছে হয়তো দু’দিনের। কিন্তু তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ১০ দিনের মজুরির টাকা। আবার কেউ কোনও কাজ না-করেও ১৪ দিনের মজুরির টাকা পেয়েছেন। যে টাকার একাংশে থাবা বসিয়েছেন সুপারভাইজাররা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement