ক্ষুব্ধ আত্মঘাতীর পরিবার

দু’সপ্তাহ পার, তারকেশ্বরের মহারাজ অধরা

পেরিয়ে গিয়েছে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময়। এখনও তারকেশ্বরের তৃণমূল নেতা মহারাজ নাগের টিকি ছুঁতে পারল না পুলিশ।কিছুদিন আগে অশোক ভট্টাচার্য নামে এলাকার এক প্রৌঢ়কে শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত করে দলীয় কার্যালয়ে সালিশি বসিয়ে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করার অভিযোগ উঠেছিল মহারাজের বিরুদ্ধে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০৩:৩৬
Share:

পেরিয়ে গিয়েছে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময়। এখনও তারকেশ্বরের তৃণমূল নেতা মহারাজ নাগের টিকি ছুঁতে পারল না পুলিশ।

Advertisement

কিছুদিন আগে অশোক ভট্টাচার্য নামে এলাকার এক প্রৌঢ়কে শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত করে দলীয় কার্যালয়ে সালিশি বসিয়ে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করার অভিযোগ উঠেছিল মহারাজের বিরুদ্ধে। টাকা জোগাড় করতে না-পেরে গত ২৪ এপ্রিল অশোকবাবুর ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন। মহারাজের বিরুদ্ধে থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগও দায়ের হয়। তারপর থেকেই পুলিশের খাতায় মহারাজ ‘পলাতক’!

কেন পুলিশ ধরতে পারছে না ওই নেতাকে?

Advertisement

জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তারকেশ্বর থানার নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের হাত-পা বাঁধা। শাসকদলের ডাকসাইটে নেতাকে ধরতে উপর মহলের অনুমতি মিলছে না।

তারকেশ্বরে তৃণমূলের গোষ্ঠী সমীকরণে মহারাজ পুরপ্রধান স্বপন সামন্তের ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত। মহারাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় ওই গোষ্ঠীর তরফে স্বপনবাবু, সমিতির সভানেত্রী সুমনা ঘোষ, দলের ব্লক সভাপতি অশোক হাজরা থানায় যান। পুলিশ সূত্রের খবর, মহারাজের গায়ে যাতে আঁচ না লাগে, সে ব্যাপারে থানায় দরবার করেন তাঁরা। স্বপনবাবু বা অশোকবাবু অবশ্য দাবি করেন, তিনি অন্য কাজে থানায় গিয়েছিলেন। সুমনাদেবী দাবি করেছেন, ‘‘মহারাজের সঙ্গে ওই পরিবারের টাকার লেনদেন হয়েছে, এটা ঠিক নয়।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত দাবি করেছেন, পুলিশকে রাজনৈতিক রং না দেখে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ সুপারের থেকে কথা বলব।

কিন্তু এতদিন পরেও মহারাজ ধরা না-পরায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অশোকবাবুর ভাই তাপস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘শাসকদলের নেতা বলেই হয়তো দোষীকে ধরা হচ্ছে না। আইন অত্যাচারিতের জন্য? না অত্যাচারীর জন্য?’’ এ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও। ক্ষুব্ধ তৃণমূলের একাংশও। মহারাজের মতো নেতাদের জন্য দলের বদনাম হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

চাঁপাডাঙা এলাকায় মহারাজ দীর্ঘদিনের ডাকসাইটে নেতা। বাম আমলে তাঁর বিরুদ্ধে সিপিএমের হয়ে বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছিল। পরে মহারাজ দল বদলে তৃণমূলে আসেন। তাঁর দাপট উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। পুলিশের একাংশের সঙ্গেও তাঁর গোপন সমঝোতা রয়েছে বলে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ। যে দিন অশোকবাবুর দেহ মেলে, সে দিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছিলেন মহারাজ। অথচ, থানার অফিসাররা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন মনে করেননি।

জেলা বিজেপি সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ যে তৃণমূ‌লের দলদাস হয়ে কাজ করছে, এটা তার প্রমাণ।’’ তারকেশ্বরের সিপিএম নেতা স্নেহাশিস রায় বলেন, ‘‘পুলিশ কী করে মহারাজকে ধরবে? উনি তো চেয়ারম্যানের মানসপুত্র!’’

তৃণমূলের একাংশের দাবি, দলের কিছু নেতার সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রয়েছে মহারাজের। তিনি মোবাইল ব্যবহার করছেন। হোয়াটসঅ্যাপ করছেন। তবে, আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেও মহারাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর বাবা, তালপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান তারকনাথ নাগ বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন