গতি পেয়েছে কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
জমিদাতাদের পুনর্বাসন নিয়ে জট কেটেছে। মাস চারেক বন্ধ থাকার পরে চন্দননগরে পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে দিল্লি রোডের সঙ্গে জি টি রোডের সংযোগকারী উড়ালপুল তৈরির কাজ। সব কিছু ঠিকঠাক চললে চলতি বছরে দুর্গাপুজোর আগেই উড়ালপুলটি চালু করে দেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ।
চন্দননগর পুরসভার মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মানুষের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হতে চলেছে। দ্রুত গতিতে উড়ালপুল নির্ণাণের কাজ চলছে। আশা করা যায় দুর্গাপুজোর আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। উৎসবের সময় মানুষ সেতুটি ব্যবহার করতে পারবেন।’’
পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখার বৈদ্যবাটি এবং মগরা স্টেশন সংলগ্ন রাস্তা দিয়েই একমাত্র ট্রাক বা বড় গাড়ি জি টি রোড-দিল্লি রোডে যাতায়াত করতে পারে। এ ছাড়া, অন্যান্য স্টেশনের গলাপুল বা সাবওয়ে দিয়ে ছোট গাড়ি গেলেও বড় গাড়ি যেতে পারে না। বৈদ্যবাটি থেকে মগরার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। ফলে, কোনও বড় গাড়ি বা পণ্যবাহী ট্রাক বৈদ্যবাটি বা মগরার মধ্যে কোনওটির জিটি রোড এবং দিল্লি রোডের সংযোগকারী রাস্তা দিয়ে যেতে না পারলে অনেকটা ঘুরে অন্য সংযোগকারী রাস্তাটি ধরতে হয়। এতে সময় বেশি লাগে। এই সমস্যা মেটাতেই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর চন্দননগরে দুই সড়কের সংযোগকারী উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় চন্দননগর পুরসভাকে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উড়ালপুলটি তৈরিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় নির্মাণকাজ। শহরের কলুপুকুর মেন রোডের ভাগাড়ের ধার থেকে রেল লাইনের উপর দিয়ে অপর পাড়ের ভোলা রোডের আশ্রম মাঠের কাছে মেশানো হচ্ছে উড়ালপুলটিকে। দু’দিকের অ্যাপ্রোচ রোড এবং উড়ালপুলের অংশ মিলিয়ে যা লম্বায় হবে চার কিলোমিটার। এর মধ্যে শুধু উড়ালপুলটি হবে ৮০০ মিটার লম্বা। উড়ালপুলটিকে ধরে রাখবে ৩১টি কংক্রিটের স্তম্ভ (পিলার)। ইতিমধ্যে ২৮টি স্তম্ভের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে রেলের অংশের কাজ। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অনুমোদনও রেল কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন বলে পুরসভার দাবি।
কিন্তু এই নির্মাণকাজ হঠাৎই থমকে যায় গত বছর ডিসেম্বরে। পুরসভার দাবি, উড়ালপুলটি তৈরির জন্য শহরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষগ্রাম এলাকার ১৩টি পরিবারকে সরানো এবং ১৩ একর জমির প্রয়োজন হয়। প্রকল্পের বাকি স্তম্ভের জন্য আর জমির প্রয়োজন হয়নি। তা পুরসভার নিজের হাতেই ছিল। কিন্তু যাদের জমি অধিগ্রণের প্রয়োজন পড়ে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হলে সেই সব পরিবার জমি ছাড়তে রাজি হননি। এ নিয়েই টানাপড়েনের জেরে প্রায় চার মাস বন্ধ থাকে নির্মাণকাজ। এখন অবশ্য সেই জট কেটেছে। রেললাইনের ধারে স্তম্ভ তৈরির কাজও চলছে।
পুরসভা জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১০টি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে শহরের অন্যত্র। তিনটি পরিবারকে আপাতত স্থানীয় কমিউনিটি হলে রাখা হয়েছে। তাঁদের হাতে ক্ষতিপূরণের কাগজপত্র ইতিমধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁদেরও ঘর বানিয়ে দেওয়া হবে। পুনর্বাসনের জন্য ২১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
কমিউনিটি হলে যাঁদের আপাতত থাকতে হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে বিভূতি ঘোষ বলেন, ‘‘উড়ালপুলটি তৈরি হলে মানুষের সুবিধাই হবে। তাই জমি দিয়েছি। ক্ষতিপূরণের কাগজপত্র পেয়ে গিয়েছি।’’ ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম নেতা গোপাল দাস জানান, এখন আর কোনও জটিলতা নেই। ক্ষতিপূরণ মেলায় ১৩টি পরিবারই উড়ালপুলের জন্য জমি দিয়ে দিয়েছেন।