Singer

প্রতিভা অনেক, তালিমের অপেক্ষায় চাঁদমণি

বিশেষ করে অনলাইনে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের হিড়িকের মাঝেও আলাদা করে নজর কেড়েছে হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে চাঁদমণি।  

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২০ ০৩:২১
Share:

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে হুগলির এক আদিবাসী কিশোরীর গাওয়া দু’টি গানের ভিডিয়ো। একটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে’। অন্যটি, সঙ্গীতশিল্পী নেহা কক্করের গাওয়া ‘ও হমসফর’ গানটি। চাঁদমণি হেমব্রম নামে বছর পনেরোর ওই কিশোরীর গান গাওয়ার অনায়াস ভঙ্গি খুব পছন্দ হয়েছে সকলের। ভিডিয়ো যেমন ভাইরাল হয়েছে, তেমনই নেট-দুনিয়ার নাগরিকেরা প্রশংসায় ভরিয়েছেন মেয়েটিকে।

Advertisement

পান্ডুয়ার ইটাচুনা খন্যান গ্রাম পঞ্চায়েতের মুল্টি গ্রামে ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে প্রান্তিক পরিবারের ওই কিশোরীর গান রেকর্ড করেছিলেন শ্যাম হাঁসদা নামে এক আদিবাসী যুবক। পরে তিনি সেটা ফেসবুক, ইউটিউবে ছড়িয়ে দেন। চলতি মাসের সাত ও আট তারিখ মোবাইল ভিডিয়োয় রেকর্ড করা গান দু’টি ইতিমধ্যেই ইউটিউবে দেখে ফেলেছেন ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। প্রচুর প্রশংসা জুটেছে ফেসবুকেও।

বিশেষ করে অনলাইনে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের হিড়িকের মাঝেও আলাদা করে নজর কেড়েছে হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে চাঁদমণি।

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ভাবে ভাইরাল হয়ে রাতারাতি জীবন বদলেছে অনেকের। তেমনটা চাঁদমণির ক্ষেত্রে ঘটবে কিনা, সময় বলবে। তবে লকডাউন উঠলেই মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। প্রতিভা দেখে নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে চাঁদমণির গান শেয়ার করেছেন অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী।

মুল্টি গ্রামের এক দিকে দশটি আদিবাসী পরিবারের বাস। তারই একটি চাঁদমণিদের। তিন বোনের মধ্যে সে-ই বড়। স্থানীয় সারদেশ্বরী কন্যা বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্রী সে। সাত বছর আগে যক্ষ্মায় ভুগে মারা গিয়েছেন চাঁদমণির বাবা চুনু হেমব্রম। তারপর থেকে পরিবারের হাল ধরেছেন মা মালতি। মায়ের সঙ্গে মাঠে ধান রোয়া, ধান কাটা সহ সব কাজে সঙ্গী চাঁদমণিও। তা না হলে যে দু’বেলা দু মুঠো জোটে না। লকডাউনের মধ্যে কষ্ট আরও বেড়েছে। বর্তমানে একবেলা আত্মীয়ের বাড়িতে খাবার জোটে। কিন্তু শত কষ্টের মধ্যেও গান গাওয়ার ইচ্ছেটা মরেনি। কোনও তালিম নেওয়ার সুযোগ নেই। শুনে শুনেই চলে চর্চা।

চাঁদমণির সুরেলা গলায় সেই গানই শুনতে পেয়েছিলেন ত্রাণ বিলিতে আসা শ্যাম হাঁসদা। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক জন বন্ধু মিলে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিনে ওই পাড়ায় গিয়েছিলাম কষ্টে থাকা পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। তখনই ওর গান শুনে এত ভাল লাগল, মনে হল রেকর্ড করে নিই। সাত তারিখে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিয়ো ছাড়তেই খুব ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম।’’ পরদিন রবীন্দ্র জয়ন্তী ছিল তাই ফের চাঁদমণির কাছে গিয়ে শ্যাম রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার অনুরোধ করেন। তারপর থেকেই চারদিক থেকে প্রশংসা ভেসে আসছে।

এত কিছুর খবর রাখে না চাঁদমণি। শ্যামের ফোনেই সে বলে, ‘‘আমাদের ফোনই নেই। দাদা বলেছে, সবাই খুব প্রশংসা করেছে। আগে গান করলেই মা বকুনি দিত। এটা শুনে মা-ও খুব খুশি হয়েছে। আমি চাই ঠিক করে গান শিখে গান গাইতে। কিন্তু এত অর্থকষ্টে কী ভাবে সেটা সম্ভব হবে জানি না।’’ শ্যাম অবশ্য পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘লকডাউন কাটলে ওকে গান শেখানোর জন্য যোগাযোগ করতে চান বলে অনেকে জানিয়েছেন। আশা করি ভাল কিছু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন