—নিজস্ব চিত্র।
মন দিয়ে পুজো দেখুন। কিন্তু অন্য অভিসন্ধি থাকলে সাবধান। আড়াল থেকে আপনাকে নজরে রেখেছে পুলিশের চোখ। পুজো মণ্ডপে বা রাস্তায় সুন্দরীদের দেখে রোমিওরা আকৃষ্ট হলেও সব সময় তা নিরাপদ নাও হতে পারে।
জগদ্ধাত্রী পুজোয় চন্দননগরকে এ বার আঁটোসাটো নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হচ্ছে। কদিন পরেই পুজো। নিরাপত্তার প্রশ্নে বিধিবদ্ধ ব্যবস্থার পাশাপাশি এমন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যা আগে হয়নি বলে জেলা পুলিশের দাবি। ওয়াচ টাওয়ার, ইউভিএসএম, ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর থেকে কুইক রেসপন্স টিম—সব থাকছে নয়া ব্যবস্থায়। থাকছেন সুন্দরী, টিপটপ মেয়েরা। তাঁদের দেখে কোনওরকম বেচাল করলে পুজোর আসর থেকে একেবারে হাজতে ঠাঁই হতে পারে। কারণ ওঁদের মধ্যেই রয়েছে মহিলা পুলিশ।
নিরাপত্তার পাশাপাশি এবার মদ্যপদের শায়েস্তা করতে থাকছে সাদা পোশাকের প্রচুর পুলিশ। জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, চন্দননগরে এ বার অন্তত এক হাজার সাদা পোশাকের পুলিশ রাখা হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে জলে-স্থলে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী। গঙ্গায় পুলিশের নজরদার লঞ্চ থাকছে ২৪ ঘণ্টা। প্রতিটি ঘাট থাকবে সিসি ক্যামেরায় নজরবন্দি। ।
পুলিশের হিসাব অনুয়ায়ী, চন্দননগরে ঠাকুর দেখতে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার লাখ মানুষ ভিড় করেন। পঞ্চমী এবং ষষ্ঠীতে ভিড় কিছুটা কম হলেও জনতার ঢল নামে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে। তবে দশমীতে বি়জয়া দেখতে আসা ভিড় সব হিসাবকেই ছাপিয়ে যায়। চন্দননগরে দীর্ঘদিন জগদ্ধাত্রী পুজোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামাল দেওয়ার অভি়জ্ঞতা রয়েছে এক পুলিশ কর্তার। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিবার বিজয়ার রাতেই মনে হয় এ বারের ভিড় গতবারকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তবে এটা বাস্তব, দর্শনাথীদের অধিকাংশই নিয়মনিষ্ঠ এবং রুচিশীল। না হলে, শুধুমাত্র পুলিশ দিয়ে যে এই ভিড়কে ঠেকানো যাবে না এতদিনের অভিজ্ঞতায় তা বুঝে গিয়েছি।’’
কিন্তু এ বার বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন?
প্রশ্নের উত্তর দিলেন পুলিশ কর্তারাই। তাঁদের যুক্তি, দেশের নানা প্রান্তে অস্থিরতা যে ভাবে বাড়ছে তাতে চন্দননগরে উৎসবের দিনগুলিতে যাতে কোনও অঘটন না ঘটে তার জন্যই পুলিশ এবার অতিমাত্রায় সর্তক। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, রাজ্য পুলিশ, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকেও জেলার পুলিশ কর্তাদের ‘বার্তা’ দেওয়া হয়েছে, ‘কোনওরকম শিথিলতা নয়’। পুজোর দিনগুলিতে তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ত্রুটিহীন রাখতে জেলার পুলিশ কর্তারা এবার মরিয়া। রাজ্য পুলিশ ‘ডিরেক্টরেট’ থেকেও জেলা প্রশাসনকে এ জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মী দেওয়ার প্রশ্নে আশ্বস্ত করা হয়েছে। হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীন ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘এবার আমরা আগে থেকেই পুলিশ বাহিনী পেয়ে যাব। ঠিক সময়ে বাহিনী পেলে তাঁদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়।’’
চন্দননগরে যে সব জায়গায় দিয়ে মানুষ শহরে ঠাকুর দেখতে ঢোকেন, সেরকম অন্তত ১০০টি জায়গা পুলিশ চিহ্নিত করেছে। এছাড়াও চিহ্নিত করা হয়েছে বেশি ভিড় হয় এমন কিছু এলাকাকে। বাছাই করা ১০০টির বেশি জায়গায় বসছে সিসি ক্যামেরা। পুলিশের মোবাইল ভ্যানেও বসানো হচ্ছে সিসি টিভি। চন্দননগরের জন্য খোলা হচ্ছে পুলিশের বিশেষ কন্ট্রোল রুম। পুজোর দিনগুলিতে ২৪ ঘণ্টাই ক্যাম্প করে থাকবেন জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। যাতে কোনও প্রয়োজন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
তবে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো বলা হলেও আদতে এই পুজো মানকুণ্ডু, ভদ্রেশ্বর ছাড়াও চুঁচুড়ার একাংশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। এই বিস্তীর্ণ এলাকাকে পুলিশি ভাষায় কয়েকটি ‘সেক্টরে’ ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্বে থাকছেন পুলিশ কর্তারা। এছাড়াও থাকছে পর্যাপ্ত ফ্লাইং স্কোয়াড। যাতে কোনও খবর এলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
মোটের উপর নিশ্চিন্তে পুজো দেখার সমস্ত উপকরণই মজুত থাকছে চন্দননগরে। এখন অপেক্ষা শুধু উৎসবে মেতে ওঠার।
•১০০-র বেশি জায়গায় সিসি টিভি-র নজরদারি।
•ইউভিএসএম ব্যবস্থা।(গাড়ির নীচ পর্যন্ত ন়জরদারি আয়নায় পরীক্ষা।)
•গঙ্গায় পুলিশ লঞ্চে টহলদারি।
•প্রতিটি ঘাটে নজরদার ক্যামেরা।
•মহিলাদের নিরাপত্তায় প্রশিক্ষিত প্রমীলাবাহিনী।
•কুইক রেসপন্স টিম।
•সিসি টিভি লাগানো মোবাইল ভ্যান।
•বিশেষ গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা।