জনসংযোগে কৃষ্ণ শরণে শাসক, খোঁচা বিরোধীদের

জন্মাষ্টমী পালিত হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি হিসেবে। শ্রীকৃষ্ণকে সামনে রেখে জনসংযোগের জন্য এই দিনটিকেই বেছে নিয়েছিলেন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:১২
Share:

উৎসব: জন্মাষ্টমীতে শোভাযাত্রা তৃণমূলের। ছবি: তাপস ঘোষ

বঙ্গ রাজনীতিতে রামের একচেটিয়া আধিপত্যে ভাগ বসাবেন শ্রীকৃষ্ণ! শুক্রবার হুগলিতে জন্মাষ্টমীতে শাসক দলের উদ্যোগে শোভাযাত্রার বহর দেখে অনেকেই এই প্রশ্ন করছেন। শ্রীকৃষ্ণ রাজনীতির ময়দানে প্রভাব বিস্তার করতে পারুন না পারুন, বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তর্জা শুরু হয়েছে।

Advertisement

জন্মাষ্টমী পালিত হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি হিসেবে। শ্রীকৃষ্ণকে সামনে রেখে জনসংযোগের জন্য এই দিনটিকেই বেছে নিয়েছিলেন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার।

এ দিন বিকেলে তাঁর নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয় সাহাগঞ্জে নেতাজি স্পোর্টস ক্লাবের মাঠ থেকে। হাজার খানেক মানুষের ওই শোভাযাত্রায় গোটা পঞ্চাশ ট্যাবলো ছিল। তাতে কচিকাঁচা থেকে মাঝবয়সীরা রাধা বা কৃষ্ণ সেজেছেন। কেউ শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কেউ হয়েছেন কৃষ্ণের সখী। চলেছে খোল-করতাল সহযোগে কীর্তন। ভক্তিরসে মজে পথ হেঁটেছেন বিধায়ক অসিতবাবু থেকে পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বা দলের অন্য কাউন্সিলররা। মাথায় ‘জয় শ্রীকৃষ্ণ’ লেখা ফেট্টি বেঁধে কীর্তনে গলা মিলিয়েছেন দলের সমর্থকরা। প্রবল উৎসাহে অনেকে ‘জয় শ্রীকৃষ্ণ’ আওয়াজ তুলেছেন। টোটোর মাথায় উড়েছে তৃণমূলের দলীয় পতাকা। ব্যান্ডেল চার্চ, পিপুলপাতি মোড়, হাসপাতাল রোড ঘুরে শোভাযাত্রা শেষ হয় ঘড়ির মোড়ে। সেখানে ছিল তালের বড়া, মালপোয়ার আয়োজন।

Advertisement

শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে মাতামাতির পিছনে যে রাজনীতি রয়েছে, বিধায়কের কথাতেই তা পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘‘একটা দল ধর্মের মাধ্যমে যে উন্মাদনা তৈরি করছে তা মানুষের ক্ষতি করছে। এই উন্মাদনা রুখতে আমরা শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে পরিক্রমায় বেরিয়েছি।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা কিন্তু ওদের মতো ধর্মান্ধ নই। আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী।’’

সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই অবশ্য একে শাসক দলের ‘চমক’ বলে মনে করছেন। শ্যামল দাস নামে এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে ধর্মের ছোঁয়া লেগেছে। এ সব না করে কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিক।’’ এক রিকশাচালকের কথায়, ‘‘এ সব করে কি হবে? টোটো বেরনোর পরে আমাদের রোজগার তলানিতে। নেতারাই টোটো কিনে খাটাচ্ছেন। সব মানুষ যাতে খেয়েপরে বাঁচেন, ওঁরা সেটা দেখুন।’’ শোভাযাত্রা দেখে এক মহিলার মন্তব্য, ‘‘একে রামে রক্ষে নেই শ্রীকৃষ্ণ দোসর!’’

বিজেপি নেতৃত্বও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না। বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পালের কটাক্ষ, ‘‘ভোটে হেরে বিধায়ক এবং তাঁর দল খুড়কুটোর মতো যা পাচ্ছেন, আঁকড়ে ধরতে চাইছেন। শ্রীকৃষ্ণকেও খড়কুটো ভেবেছেন। কিন্তু কোনও কিছুতেই ওদের তরী ভাসবে না।’’ সিপিএম নেতা সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় পাছে হিন্দুরা অসন্তুষ্ট হয়, সেই জন্যই এই চমক।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘মানুষের সমস্যা ভুলিয়ে দিতে বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’দলই এ সব করছে। ধর্মীয় মেরুকরণ যাতে আরও ভাল ভাবে হয়, সেটাই ওদের লক্ষ্য। এটা ওদের প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা।’’

বিধায়ক অসিতবাবু অবশ্য বলছেন, সনাতন হিন্দুধর্ম সম্পর্কে যাঁদের সম্যক ধারণা নেই, তাঁরাই এমন কথা বলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন