গরিবের বাড়ি তৈরির কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়

চন্দননগরে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর

গরিব মানুষের জন্য বাড়ি তৈরির কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ আগেই উঠেছিল। মাসখানেক আগে চন্দননগর পুরসভার প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধক্ষ্য তৃণমূল নেতা-সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুর কমিশনার থানায় অভিযোগ করেন।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৮:১০
Share:

কোথাও শুধু ভিত দেওয়া হয়েছে (বাঁদিকে)। কোথাও ছাদ পড়েনি। তবুও তুলে নেওয়া হয়েছে পুরো টাকা। ছবি: তাপস ঘোষ।

গরিব মানুষের জন্য বাড়ি তৈরির কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ আগেই উঠেছিল। মাসখানেক আগে চন্দননগর পুরসভার প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধক্ষ্য তৃণমূল নেতা-সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুর কমিশনার থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত শুক্রবার থেকে চন্দননগর থানা মামলাও শুরু করেছে। যদিও এর মধ্যেই ওই পুর কমিশনার বদলি হয়ে যান।

Advertisement

অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা, বর্তমান পুরবোর্ডের কাউন্সিলর শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘মূল অভিযুক্তদের আড়াল করতেই দলের একাংশ আমাকে ফাঁসাতে চাইছে।’’ মেয়র রাম চক্রবর্তীও শুভেন্দুবাবুর পক্ষেই সওয়াল করায় শাসকদলের চাপানউতোর নিয়ে পুরসভা সরগরম। মেয়রের কথায়, ‘‘পুর কমিশনার সরকারি নিয়ম অনুয়ায়ীই বদলি হয়েছেন। কিন্তু তাঁর বদলির জন্য ওই কাউন্সিলারকে দায়ী করে এভাবেই ঝাল মেটাচ্ছেন।’’ জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যে সমস্ত গরিব মানুষের নিজের জমি রয়েছে অথচ বাড়ি তৈরির সঙ্গতি নেই, কেন্দ্রের বিএসইউপি প্রকল্পে তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। রাজ্যের প্রতিটি পুরসভাতেই এই প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পকে সামনে রেখে লক্ষ লক্ষ টাকার অনিয়মের অভিযোগ ওঠে চন্দননগর পুরসভায়। মাস কয়েক আগে বিষয়টি নিয়ে শোরগোল হতে জনস্বার্থে একটি মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর জানতে চান, প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে? তিনি সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। এরপরই চন্দননগর পুরকর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে অভিযোগের সারবত্তা মেলায় পুর কমিশনার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

Advertisement

কী ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে তদন্তে?

প্রকল্পের নিয়ম অনুয়ায়ী বাড়ির তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি তুলে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে তা জমা দিতে হয়। তারপরেই প্রকল্পের টাকা তুলে দেওয়া হয় উপভোক্তার হাতে। তদন্তে জানা গিয়েছে, অন্যের তৈরি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সেই বাড়ির ‘ছবি’ নিজের বলে চালিয়ে সরকারি প্রকল্পের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসায় পুর কমিশনার উজ্জ্বল সেনগুপ্ত তদন্তের নির্দেশ দেন। পুরসভার সংশিষ্ট বিভাগের এক কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়। অভিযোগ ওই পুরকর্মী নিজের স্ত্রীকে প্রকল্পের অন্তভুর্ক্ত করে ভুয়ো ছবির ভিত্তিতে টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। তদন্তে আরও জানা যায়, আদপেই গরিব নন এমন বেশ কিছু মানুষকে প্রকল্পে ঢোকানো হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, তদন্তে দেখা গিয়েছে চন্দননগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র বাড়ির ভিত তৈরি করেছেন। সেই হিসেবে প্রকল্পের গাইড লাইন মেনে তাঁর মাত্র ৫০ হাজার টাকা পাওনা হয়। কিন্তু ভুয়ো তথ্য জমা দিয়ে তিনি ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। একইভাবে করবী ধাড়া নামে এক মহিলাও পাওনার থেকে অনেক বেশি টাকা তুলেছেন ভুয়ো ছবি দিয়ে। বিএসইউপি প্রকল্পের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের পরিদর্শকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি এ কাজে সহায়তা করেছেন। করবীদেবী তাঁরই স্ত্রী। পুরসভা সূত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, তদন্তের চিঠি পাওয়ার পরওই পরিদর্শক তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকারও করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন