হাওয়ায় ভাসছে বোমার গন্ধ

বুধবার সকালে আমতার চন্দ্রপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বোমাবাজিতে আতঙ্ক এতটাই ছড়ায় যে এলাকা কার্যত সুনসান হয়ে যায়।

Advertisement

সুব্রত জানা

আমতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২৮
Share:

ত্রস্ত: বন্ধ রাখা হয়েছে প্রাথমিক স্কুল।

বাতাসে বারুদের গন্ধ। কান পাতলেই পুলিশের ভারী বুটের শব্দ। এলাকা একেবারে থমথমে।

Advertisement

বুধবার সকালে আমতার চন্দ্রপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বোমাবাজিতে আতঙ্ক এতটাই ছড়ায় যে এলাকা কার্যত সুনসান হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল ও বাজারহাট। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান ওই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। আতঙ্ক ছড়ায় পাশের পঞ্চায়েত এলাকাতেও। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভাণ্ডারগাছার সামন্ত পাড়ার সমীর সামন্ত। রবিবার তাঁর মেয়ের বিয়ে। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের কোনও বিপদ হবে না তো! দিনভর এই দুশ্চিন্তাতেই কেটেছে সমীরবাবুর।

বৃদ্ধের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের সব প্রক্রিয়াই তো থমকে গিয়েছে। আবার কোনও গোলমাল হবে না তো! জানি না মেয়ের বিয়ে নির্বিঘ্নে দিতে পারব কিনা!’’

Advertisement

এ দিন সকালে বোমাবাজির মধ্যে হঠাৎ বাড়ির দরজায় খটখট, সঙ্গে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ওই পাড়ারই রাধা সামন্ত। দরজা খুলে দেখেন, তাঁর নাতি নীলাদ্রি। দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বৃদ্ধা। তাঁর কথায়, ‘‘ও বারবার বলছিল ঠাকুমা দরজা খোলো। খুলতেই দেখি ও থরথর করে কাঁপছে।’’ নীলাদ্রি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ঠাকুমার কোলে বসে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে বলে, ‘‘আমি মাস্টারমশাইয়ের কাছে পড়তে গিয়েছিলাম। ফেরার সময় দেখি রাস্তা দিয়ে অনেক লোক বোম ফাটাতে ফাটাতে যাচ্ছে। চারিদিকে ধোঁয়া। অনেকের হাতে বন্দুক।’’

গ্রামের ঝোপ থেকে উদ্ধার হয়েছে এই ওয়ান শটার।

আমতার এ তল্লাটে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। ১১ আসনের এই পঞ্চায়েতে এ বার বিরোধীরা কোনও মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। শুধু তৃণমূলই মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এলাকার তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনেরও প্রার্থী শুধুই শাসকদলের নেতারা। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, বছরতিনেক ধরে চন্দ্রপুরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে। একদিকে আছেন প্রধান সাহানারা বেগম মিদ্যার স্বামী আসফার মিদ্যা এবং ওবায়দুল্লা নামে দুই তৃণমূল নেতা। অন্যদিকে আছেন শেখ ফারুক নামে এক নেতা ও তাঁর দলবল। পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও দুই গোষ্ঠীর বিবাদ হয়েছিল। দলের শীর্ষনেতারা বসে পঞ্চায়েতের ১১টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৩টি আসনে উভয় গোষ্ঠীর কারা প্রার্থী হবেন, তা ঠিক করে দেন। সেইমতো মনোনয়ন জমা পড়ে। এ বার দড়ি টানাটানি পঞ্চায়েতে কোন গোষ্ঠীর দাপট থাকবে তা নিয়ে। উভয় গোষ্ঠীই চাইছে, তাদের মধ্য থেকে প্রধান, সঞ্চালক প্রভৃতি পদের লোক বেছে নেওয়া হোক। আসফারদের বিরুদ্ধে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা হ্যান্ডবিলও ছড়ান বলে অভিযোগ।

এই বিবাদকে কেন্দ্র করেই বুধবার সকালে উভয়পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। আসফারের অভিযোগ, ওবায়দুল্লার ভাই ইব্রামের বাড়িতে বোমা নিয়ে হামলা

করে ফারুকের লোকজন। ফারুকের গোষ্ঠীর পাল্টা অভিযোগ, আসফারের সমর্থকেরাই তাঁদের লক্ষ করে বোমাবাজি করে। পুলিশ গেলে বিবদমান গোষ্ঠীর লোকজন পালিয়ে যায়। গোলমালের মধ্যে গুলিও চলে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। ঘটনায় অবশ্য কেউ হতাহত হননি। পুলিশ চাতরা থেকে একটি ওয়ান শটার উদ্ধার করে।

গোলমালের সময় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এলাকায় পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ নামানো হয়। তবু ভয় যাচ্ছে না এলাকাবাসীর। ঘোষপাড়ায় লব টাড বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের গোলমালের জন্য আমাদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। পাড়ায় চারটে বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। কী ভাবে হবে বুঝতে পারছি না।’’

পুলিশ অবশ্য গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেছে। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সব অনুষ্ঠানই হবে। গ্রামবাসীদের দুঃশ্চিন্তার কারণ নেই।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন