অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

দলের নামে বিল ছাপিয়ে চাঁদার জুলুম

কোনও লুকোচুরি নয়। একেবারে দলের নামে বিল ছাপিয়ে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ উঠল গোঘাটের এক তৃণমূল নেতা এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

পী়যূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৫
Share:

রক্তদান শিবির উপলক্ষে ছাপানো সেই বিল। —নিজস্ব চিত্র।

কোনও লুকোচুরি নয়। একেবারে দলের নামে বিল ছাপিয়ে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ উঠল গোঘাটের এক তৃণমূল নেতা এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর গোঘাট-১ ব্লকের কুমুড়শা অঞ্চলে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন। এই উপলক্ষে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। সে জন্যই সরাসরি দলের নামে বিল ছাপিয়ে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ উঠল সেখানকার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি অভয় কুণ্ডু ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ছোট চাষি থেকে ব্যবসায়ী, স্কুল শিক্ষক— সকলেই জুলুমের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। শুধু এলাকার বাসিন্দারাই নন, এ ভাবে চাঁদা তোলায় ক্ষুব্ধ শাসকদলেরই স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার তোলাবাজি-জুলুমবাজি নিয়ে দলকে সতর্ক করেছেন। ‘আমি এ সব টলারেট করব না’ বলে কড়া বার্তাও দিয়েছেন তিনি। গত কয়েক বছরে নিজের চেষ্টায় দলের যে ভাবমূর্তি মমতা তৈরি করেছেন, কিছু নেতা-নেত্রীর জন্য তাতে যথেষ্ট কালি লেগেছে এবং সে কারণেই দলনেত্রী ওই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে মনে করেন তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের কিছু নেতা। কিন্তু তার পরেও দলের নিচুতলার কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগের খামতি নেই। সেই তালিকায় যুক্ত হল কুমুড়শার ঘটনাও।

Advertisement

ওই চাঁদার বিলের সঙ্গে বিলি করা হচ্ছে আমন্ত্রণপত্রও। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রয়েছে। শিবিরের উদ্বোধক হিসেবে দেখা যাচ্ছে স্থানীয় বিধায়ক মানস মজুমদারের নাম। প্রধান অতিথি আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। রয়েছে বিডিও অসিতবরণ ঘোষ এবং ওসি সমীর সরকারের নামও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অভয়বাবুর নেতৃত্বে দিন দশেক ধরে ওই বিল ধরিয়ে এলাকার শ্রমিক, চাষি, ব্যবসায়ী থেকে স্কুল— সব জায়গা থেকেই চাঁদা তোলা হচ্ছে। বিলে ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ হয়ে বিধায়ক মানসবাবুর দ্বারস্থ হয়েছেন কয়েকজন।

মানসবাবুর দাবি, তিনি রক্তদান শিবিরের কথা জানলেও চাঁদার কথা জানেন না। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। দলের নামে বিল ছাপিয়ে টাকা তোলা ঘোর দলবিরোধী কাজ। দোষ প্রমাণিত হলে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” চাঁদা তোলার কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন বিডিও এবং সাংসদও। অভিযুক্ত অভয়বাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা বিল ছাপাননি। তিনি বলেন, ‘‘ওই বিল জাল। আমরা কোনও বিল ছাপাইনি। চাঁদাও তোলা হচ্ছে না।’’

তবে, তৃণমূলেরই কেউ কেউ অন্য কথা বলছেন। মানস চট্টোপাধ্যায় নামে এক নেতা বলেন, “দলের নামে ওই ভাবে বিল ছাপিয়ে চাঁদা তোলার জন্য এলাকায় দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। আমাদের প্রতিবাদেও ওই জুলুম বন্ধ হয়নি।”

ওই রক্তদান শিবিরটি নতুন দলীয় কার্যালয় চত্বরেই হবে। সে জন্য আমন্ত্রণপত্রও ছাপানো হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগ, এমন টাকা চাঁদা দিতে বলা হচ্ছে, যা স্কুলের তহবিলে নেই। তাই তাঁরা নিজেরাই চাঁদা তোলার কথা ভাবছেন। এক চা-দোকানির অভিযোগ, ‘‘সারাদিনে ২০০ টাকারও চা বিক্রি হয় না। অথচ, আমার কাছে ৩০০ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে।’’ ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকদের অভিযোগ, চাঁদা নিয়ে কেউ আপত্তি তুললেই তাঁকে কাজ দেওয়া হবে না বলে শাসানো হচ্ছে।

এমন অভিযোগ আরও রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন