নিরাপত্তারক্ষী খুনে ধৃত তৃণমূলের নেতা

গত বছরের ১৭ জুন হাওড়ার রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ খুন হন আবাসনের নিরাপত্তা কর্মী বিজয় মল্লিক। আবাসনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে সেই খুনের ছবিও ধরা পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাওড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

আবাসনের নিরাপত্তা কর্মীর খুনের ঘটনা ঘটেছিল এক বছর আগে। সেই ঘটনায় গ্রেফতারও করা হয়েছিল ৫ জনকে। এবার ঘটনার মূল চক্রান্তকারী হিসাবে পুলিশ এক বছর পর গ্রেফতার করল তৃণমূলের এক কাউন্সিলরকে। হাওড়া পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কাউন্সিলরের নাম শৈলেশ রাই। বছর তিনেক আগে কংগ্রেস থেকে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। পুলিশের যুক্তি, মূল চক্রান্তকারী হিসাবে যাঁর নাম উঠে আসছিল তিনি যেহেতু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাই তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ জোগাড় করার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই কারণে সময় লেগেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার তেলকল ঘাটের কাছ থেকে শৈলেশবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। এ দিন দুপুরে ধৃত কাউন্সিলরকে হাওড়া আদালতে আনার পর একদল কংগ্রেস সমর্থক ধৃতের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে ধৃত কাউন্সিলরের অনুগামীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে আগে থেকে আদালত চত্বরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন থাকায় সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়। দফায় দফায় লাঠি চালিয়ে এলাকা ফাঁকা করে দেয়। পরে দু’জন কংগ্রেস সমর্থককে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

গত বছরের ১৭ জুন হাওড়ার রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ খুন হন আবাসনের নিরাপত্তা কর্মী বিজয় মল্লিক। আবাসনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে সেই খুনের ছবিও ধরা পড়ে। দেখা যায় সাদা জামা পরা এক ব্যক্তি বছর ষাটেকের ওই নিরাপত্তা কর্মীকে খুব সামনে থেকে গুলি করে পালিয়ে যাচ্ছে। একজন আপাত নিরীহ নিরাপত্তাকর্মীকে কে বা কারা কী কারণে এইভাবে খুন করল তা নিয়ে ধন্ধে পড়ে পুলিশ। ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পারে সম্পত্তি সংক্রান্ত গোলমাল কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত আক্রোশে তাঁকেই খুন করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরে এলাকার এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এর পর একে একে গ্রেফতার করে আরও চার জনকে। যার মধ্যে শৈলেশবাবুর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ প্রহ্লাদ সিংহ নাম রয়েছে। তদন্তের শেষ পর্যায়ে গ্রেফতার করা হয় সুপারি কিলার সঞ্জয় যাদবকে। সে ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার ফোর্সের জওয়ান। জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, টাকার লোভে ওই জওয়ানই বিজয়বাবুকে মারার ‘সুপারি’ নেয়। তদন্তকারীরা জানান, বিজয়কে খুন করতে কে সুপারি দিয়েছিল তা জিজ্ঞাসাবাদের সময় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম জানিয়ে দেয় ধৃত সঞ্জয়। তখন থেকেই এই খুনের ঘটনায় শৈলেশবাবু নাম জড়িয়ে পড়ে। তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হাওড়া ময়দান এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ-আন্দোলন সংগঠিত করা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও পুলিশ ধৃত পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়ে দেয়।

Advertisement

এই খুনের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে হাওড়ারই এক ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট দাখিল করলে আদালতে তা গ্রহণ করে হাওড়া সিটি পুলিশকে ভর্ৎসনা করে অবিলম্বে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব যায় খোদ হাওড়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার তথাগত পাণ্ডের ওপর। শৈলেশবাবুর নাম দিয়ে ফের অতিরিক্ত চার্জশিট তৈরি হয়। পুলিশ জানায়, দীর্ঘ দিন তদন্ত চালানোর পর উপযুক্ত প্রমাণ পেয়ে এ দিন সকালে তথাগতবাবুই নিজে গিয়ে শৈলেশবাবুকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র প্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘তদন্ত করে হাতে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আসার পরেই শৈলেশবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে খুন ও খুনের ষড়যন্ত্র সহ অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে।’’ এ দিকে দলের কাউন্সিলরের গ্রেফতারের ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে বলেছেন। পুলিশ মনে করেছে গ্রেফতার করা দরকার, তাই করেছে। উনি তৃণমূলের কোনও পদে নেই। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে এসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন