শ্যাওড়া পঞ্চায়েতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

স্ত্রী প্রধান, পঞ্চায়েতে নেতার ‘খবরদারি’

অভিযোগ, কাজলের সম্মতি না-পেলে শংসাপত্রের মতো ন্যূনতম পরিষেবা মেলে না। সরকারি আধিকারিকদের উপরে চোটপাট তো আছেই। বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তা কাজলই নির্বাচন করেন।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২০
Share:

বিতর্কিত: কাজল রায়।

তিনি পঞ্চায়েতের কর্মী নন। নির্বাচিত সদস্যও নন। ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজার মাত্র। অথচ, গোঘাট-১ ব্লকের শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের তিনিই ‘রাজা’!

Advertisement

অবশ্য তাঁর অন্য দু’টি পরিচয় আছে। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি এবং ওই পঞ্চায়েতের প্রধান বৈশাখী রায়ের স্বামী। এই পরিচয়ের জোরেই প্রতিদিন পঞ্চায়েতে স্ত্রীর পাশে বসে কাজল রায় নামে ওই নেতা খবরদারি করে চলেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা।

কেমন সেই খবরদারি?

Advertisement

অভিযোগ, কাজলের সম্মতি না-পেলে শংসাপত্রের মতো ন্যূনতম পরিষেবা মেলে না। সরকারি আধিকারিকদের উপরে চোটপাট তো আছেই। বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তা কাজলই নির্বাচন করেন। গ্রামোন্নয়নে কোথায় কী কাজ হবে, তা-ও হয় তাঁর নির্দেশে। এমনকি পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বৈঠকেও তিনি-ই সব! প্রধান পুতুলের মতো বসে থাকছেন।

তিতিবিরক্ত হয়ে গত ২ নভেম্বর গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগপত্রটি জেলা পঞ্চায়েত দফতরে জমা দেন স্থানীয় শ্যাওড়া, গোয়ালপাড়া, জোতমহব্বত, মুক্তারপুর, বেলেকুসমার মতো প্রায় ১২টি মৌজার মানুষ। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘এ সব কতদিন চলবে? স্বামী ছাড়া প্রধান যদি পঞ্চায়েত চালাতে অক্ষম হন তা হলে তিনি ইস্তফা দিন। নতুবা পঞ্চায়েতে প্রধানের স্বামীর বেআইনি হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হোক। প্রধানকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত অফিসাররা আছেন।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চায়েত আধিকারিকরাও মানছেন, পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বৈঠকেও কাজল ঢুকে পড়েন। মতামত চাপিয়ে দেন। ফলে, উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা থাকছে না। অফিস পরিচালনাতেও অসুবিধা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের কাজে দেরি হচ্ছে। পঞ্চায়েতের গোপনীয় বিষয়গুলিও সুরক্ষিত থাকছে না।

হুগলি জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক মৌমিতা সাহা বলেন, “বিডিওকে ওই অভিযোগের তদন্ত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিডিও অনন্যা ঘোষ জানান, প্রধানের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগ মানতে চাননি প্রধান এবং তাঁর স্বামী। বৈশাখীর দাবি, ‘‘স্বামী নিজের কাজেই পঞ্চায়েতে যান। আমার কাজে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ মিথ্যা।” কাজলের দাবি, ‘‘মানুষের অভাব-অভিযোগ নিয়ে বা কোনও অসুবিধা হলে পঞ্চায়েতে যাই। প্রধানের কাছে বসে থাকার কিংবা কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ মিথ্যা।”

কিন্তু গ্রামবাসীর ক্ষোভের আঁচ টের পেয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদার। তিনি বলেন, “কাজে কেউ পঞ্চায়েতে যেতেই পারেন। কিন্তু প্রধানের পাশে বসে অযাচিত খবরদারি করলে দল থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানের কাজে সহযোগিতার জন্য সরকারি আধিকারিকেরা আছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন