দাদপুরে ধৃত প্রণব চক্রবর্তী। — নিজস্ব চিত্র।
পানশালায় গোলমালের জেরে মাঝরাতে দলবল নিয়ে এক যুবকের বাড়িতে গিয়ে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন হুগলি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূল নেতা মনোজ চক্রবর্তীর দাদা প্রণব চক্রবর্তী।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া দাদপুরের গোবিন্দপুরের কাছে ওই পানশালাটি চালান প্রণববাবু। বুধবার দিবাকর ঘোষ নামে যে যুবকের উপরে প্রণববাবু ও তাঁর দলবলের হামলার অভিযোগ ওঠে, তিনি ওই পানশালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে দাদপুরের গুনপালা গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামে গোলমাল দেখে বাসিন্দারা প্রণববাবুকে ধরে উত্তমমধ্যম দেয়। একটি বাড়ির থামে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়। পুলিশ গিয়ে প্রণববাবুকে উদ্ধার করে।
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এক জনকে ধরা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ ধৃতকে বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক ধৃতের জামিন মঞ্জুর করেন।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রণববাবু। তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। ওরাই আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারে। চপারের বাট দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। গাড়িটি ভাঙচুর করে। মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ওরাই আমার হাতে চপার ধরিয়ে, গলায় বন্দুকের খাপ ঝুলিয়ে ছবি তুলে রাখে। বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানীয় কিছু যুবকের সাহায্যে কিছু দুষ্কৃতী পানশালা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ যদিও এ নিয়ে প্রণববাবু থানায় কোনও অভিযোগ জানাননি। তাঁর ভাই, তৃণমূল নেতা মনোজবাবুরও দাবি, ‘‘সুপরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’’ একই সঙ্গে অবশ্য তিনি যোগ করেন, ‘‘দাদা কোনও অন্যায় করলে তার জন্য আমি দায়ী হব না। বিচারের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার উদঘাটন হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ গুনপালার কয়েক জন যুবক ওই পানশালায় যান। সেখানে খাবারের অর্ডার এবং আগের বিল নিয়ে পানশালার লোকজনের সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। প্রণববাবু তাঁদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। ওই যুবকেরা ফিরে যান। রাত দেড়টা নাগাদ প্রণববাবু কয়েক জনকে নিয়ে গুনপালায় গিয়ে দিবাকরের বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ। দিবাকরকে ডেকে এনে মারধর করা হয়। চিৎকার-চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন বেরিয়ে আসেন। গ্রামবাসীরা প্রণববাবুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বেগতিক বুঝে অন্যেরা পালালেও প্রণব পারেননি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রণববাবুকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। তাঁর মাথায় চারটি সেলাই পড়ে।
পুলিশের কাছে প্রণব-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তাঁকে মারধরের পাশাপাশি তাঁর মোবাইল চুরির অভিযোগও দায়ের করেন দিবাকর। তাঁর দাবি, ‘‘আমি পানশালায় যাইনি। বন্ধুরা গিয়েছিল। পানশালার লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ায় ওরা চলে আসে। পরে তো ওই কাণ্ড। গ্রামবাসীরা দ্রুত বেরিয়ে আসায় আমি প্রাণে বাঁচে গিয়েছি।’’