আদিবাসীদের অবরোধে তৃণমূলের খিচুড়ি-চাটনি

অবরোধ করেছেন আদিবাসীরা। সেখানে খাবার নিয়ে হাজির তৃণমূল নেতাকর্মীরা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোঘাট শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
Share:

তোড়জোড়: জোর কদমে চলছে রান্না। নিজস্ব চিত্র

অবরোধ করেছেন আদিবাসীরা। সেখানে খাবার নিয়ে হাজির তৃণমূল নেতাকর্মীরা!

Advertisement

সোমবার দুপুরে গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন বহু মানুষ। কিন্তু অবরোধে আটকে পড়া অনেকের প্রশ্ন, নিজেদের বন্‌ধ-অবরোধ বিরোধী হিসেবে জাহির করেও তৃণমূল কেন এমন করল? কেউ কেউ এর পিছনে আদিবাসীদের সমর্থন আদায়ের কৌশল রয়েছে বলেও মনে করছেন। তৃণমূলের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরাও। গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার যাবতীয় জল্পনা উড়িয়ে অবশ্য দাবি করেন, ‘‘মানবিক কারণেই দলের ছেলেরা এই আয়োজন করেছেন।”

অলচিকি ভাষার প্রসার, স্কুলগুলিতে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ-সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়ায় এ দিন রাজ্য জুড়ে সড়ক ও রেল অবরোধের ডাক দিয়েছিল আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। সকাল ৭টা থেকে কামারপুকুর চটিতে ওই অবরোধ শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ধামসা-মাদল, তির-ধনুক, টাঙ্গি নিয়ে অবরোধে সামিল হন বহু আদিবাসী। নাচ-গানের অনুষ্ঠান হয় দফায় দফায়। দুপুরে বাঁকুড়া জেলা থেকেও কিছু আদিবাসী এসে অবরোধে সামিল হন।

Advertisement

দীর্ঘক্ষণ অবরোধের জেরে দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার সঙ্গে আরামবাগ, কলকাতা, বর্ধমান এবং তারকেশ্বরের বাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নাকাল হন বহু নিত্যযাত্রী। কেউ কেউ হেঁটে গিয়ে দূরে ট্রেকার, ভ্যান বা টোটো ধরে বেঙ্গাই বা পচাখালি গিয়ে বাস ধরেন। এর মধ্যেই রাস্তার একধারে তৃণমূল নেতাকর্মীরা খিচুড়ি, আলুর দম আর টোম্যাটোর চাটনি তৈরি শুরু করে দেন। দুপুরে সেই খাবারই পরিবেশন করা হয়। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৮০০ জনের জন্য ওই আয়োজন করা হয়েছিল। কথা ছিল, খিচুড়ি খেয়ে তাঁরা অবরোধ তুলে নেবেন। কিন্তু তা হয়নি। এ জন্য সামান্য গোলমালও হয়। তবে, শেষ পর্যন্ত অবরোধকারীরা সেই খাবার খান।

তৃণমূলের এই ‘মানবিকতা’কে বিঁধেছে বিরোধীরা। সিপিএমের আরামবাগ ২ নম্বর এরিয়া সম্পাদক উত্তম সামন্ত বলেন, ‘‘আদিবাসী এলাকায় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে যে ভাঙন ধরেছে, তা পঞ্চায়েত নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেটা ফিরে পেতেই খাবার খাইয়ে শাসকদল মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ বিজেপির আরামবাগ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল বন্‌ধ-অবরোধ নিয়ে দ্বিচারিতা করছে। তাতে সাধারণ মানুষের কাছে হাসির খোরাক হচ্ছে।’’

বিধায়ক মানসবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে ওই সংগঠনটিকে বেলা ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি পালনের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সংগঠনের নেতারা রাজি হয়েও সকাল থেকে অবরোধ শুরু করে দেন।’’ আদিবাসীদের ওই সংগঠনের গোঘাটের নেতা সহদেব সরেন পাল্টা দাবি করেন, ‘‘আগাম ঘোষণা মতোই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।’’ তবে, তৃণমূলের খিচুড়ি-চাটনি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন