প্রতিকূলতাকে জয় সৈকত, অনিতার

বাবার ছোট মুদির দোকান ঢিমেতালে চলে। তাই সংসার চালাতে সেলাইয়ের কাজ করতে হয় মাকেও। এই আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে আমতার দেবান্দী গ্রামের মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা সৈকত মণ্ডল। সে এ বার মাধ্যমিকে ৬৫৯ নম্বর পেয়ে গ্রামের মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এই কৃতী ছাত্রের বাড়ি জানতে চাইলে গ্রামের ফটিক এক কথায় পথ চিনিয়ে নিয়ে গেল। জীর্ণ ইটের দু’কামরার ঘর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আমতা ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০১:৪৬
Share:

সৈকত মণ্ডল ও অনিতা বেরা।

বাবার ছোট মুদির দোকান ঢিমেতালে চলে। তাই সংসার চালাতে সেলাইয়ের কাজ করতে হয় মাকেও। এই আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে আমতার দেবান্দী গ্রামের মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা সৈকত মণ্ডল। সে এ বার মাধ্যমিকে ৬৫৯ নম্বর পেয়ে গ্রামের মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এই কৃতী ছাত্রের বাড়ি জানতে চাইলে গ্রামের ফটিক এক কথায় পথ চিনিয়ে নিয়ে গেল। জীর্ণ ইটের দু’কামরার ঘর। একটি টালির ছাদ ও অপরটি ঢালাই ছাদ হলেও মেরামতের অভাবে ছাদের চাঙড় ভেঙে পড়েছে। বাবা শীতল মণ্ডল বলেন, ‘‘যৎসামান্য জমিও আছে। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে আমার সংসার। ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিকে কী ভাবে ভর্তি করব চিন্তায় রয়েছি।’’ আক্ষেপ মা কাজলদেবীর গলায়ও।

Advertisement

বাণেশ্বরেপুর, রামচন্দ্রপুর, আনুলিয়া ইউনাইটেড হাইস্কুল থেকে এ বার পরীক্ষা দিয়েছে সৈকত। প্রধান শিক্ষক অরূপ নায়ার ও সহকারী শিক্ষক কৌশিক চিনা বলেন, ‘‘সৈকত পঞ্চম শ্রেণি থেকেই আমাদের স্কুলে পড়াশোনা করে আসছে। শুরু থেকেই ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছে। ছুটির বা টিফিনের সে শিক্ষকদের কাছে পড়াশোনার বিষয় নিয়ে দৌড়ে আসত।’’ সৈকতের ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়র হয়ে মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা করা। বাবার ইচ্ছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করানো। আর মা দিনরাত সেলাইয়ের কাজ করে ছেলের ইচ্ছা ইচ্ছাপূরণ করতে চান।

সৈকতের মতো আর্থিক প্রতিকূলতাকে জয় করে ৬১০ নম্বর পেয়ে স্কুল ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছে উলুবেড়িয়ার বৃন্দাবন গ্রামের এই গরিব ঘরের মেয়ে অনিতা বেরা। নোনা ধরা ইটের দেওয়ালে টালির ছাউনি ও প্লাস্টিক ঘেরা বাড়িতে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন মনিমোহন বেরা। বর্ষাকাল এলেই চিন্তা বেড়ে যার তাঁর। ঘরে জল পড়তে শুরু করলে রাত জেগে থাকতে হয় তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী জয়ন্তীদেবীকে। মনিমোহনবাবুর হার্টের অসুখ। পাড়ার এক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এই অবস্থায় সংসার সামলে মেয়ের পড়া বন্ধ করে দিতে চেয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু অনিতার জেদ, সে পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে বাবার পাশে দাঁড়ানো। তাই যখন সে অষ্টম শ্রেণিতে, তখন সে নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করতে টিউশন পড়াতে শুরু করে। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে এ বার সে বাণীবন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল। তার দু’জন গৃহ শিক্ষক ছিল। নিজেই টিউশন পড়িয়ে সেই খরচ মেটাতো। স্বভাবতই তার এই সাফল্যে খুশি বাবা-মা সকলেই।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন