নিজের ঘরে নির্যাতনের শিকার প্রবীণা শিক্ষিকা, প্রশাসনের দ্বারস্থ সহকর্মীরা

নিজের বাড়িতেই অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষিকা অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার। এর প্রতিকার চেয়ে জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের দ্বারস্থ হন তাঁর কর্মজীবনের সহকর্মীরা। বিষয়টি জানার পর নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০১:২৩
Share:

নিজের বাড়িতেই অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষিকা অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার। এর প্রতিকার চেয়ে জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের দ্বারস্থ হন তাঁর কর্মজীবনের সহকর্মীরা। বিষয়টি জানার পর নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ইতিমধ্যেই এক অফিসারকে তদন্ত করে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই অফিসারের রিপোর্টের ভিত্তিতে চিত্রলেখা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই প্রাক্তন শিক্ষিকার ছেলেকে ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

চন্দননগরের নামী স্কুল কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষা মন্দিরে দীর্ঘদিন শিক্ষাকতা করেছেন চিত্রলেখাদেবী। বর্তমানে তাঁর বয়স ৮০ পেরিয়ে গিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষিকা পেনসনও পান। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে সঠিকভাবে দেখভাল করা হচ্ছে না কেন? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর শরীরের পিছনের অংশে একটি ক্ষত রয়েছে। মাস কয়েক আগে পড়ে গিয়ে তিনি আঘাত পান। তারপর থেকেই তাঁর শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়। স্কুলের এক সময়ের সহকর্মীরা তাঁকে দেখতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। কৃষ্ণভামিনী স্কুলে দীর্ঘদিন ইংরেজি পড়িয়েছেন এলা সেনগুপ্ত। তিনিও অবসর নিয়েছেন। এলাদেবী বলেন, ‘‘চিত্রলেখাদি-র সঙ্গে ২০-২৫ বছর একসঙ্গে চাকরি করেছি। কিন্তু যা শুনছি, তা মর্মান্তিক। তাঁকে মেঝেতেও শুইয়ে রাখা হয়। আমাদের যে সব সহকর্মীরা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন, তাঁরাই বিষয়টি দেখেছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ জানাজানি হতেই এর প্রতিকার চেয়ে চন্দননগরের প্রবীণ নাগরিকেরা মহকুমাশাসককে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেন। স্মারকলিপিও দেন। একই সঙ্গে তাঁরা চন্দননগর প্রবীণ নাগরিক অধিকার মঞ্চকে বিষয়টি জানান। এর পরেই জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের অফিসার মৈত্রী চক্রবর্তীকে ওই শিক্ষাকার বাড়িতে পাঠানো হয়।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা ওই শিক্ষিকার ছেলে ও বৌমা রয়েছেন। বাড়িতে অন্য নিকটজনেরাও আছেন। তবে কারও সঙ্গে তাঁর বনিবনা নেই বলে জানা গিয়েছে। যতদিন শাশীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন, কোনও সমস্যা হয়নি। বাড়ির একতলায় সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি ভিন্ন ব্যবস্থায় একা থাকতেন। কিন্তু বিপদ হয় মাস কয়েক আগে তিনি পড়ে গিয়ে অসুস্থ হতেই। তখন তাঁকে দোতলায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই শিক্ষাকা তাঁর প্রিয়জনদের কাছে অভিযোগ করেছেন,‘‘তাঁকে মেঝেয় শুইয়ে রাখা হয়। অনেক সময় তাঁকে পোশাকও ঠিকমতো দেওয়া হয় না।’’ তাঁর নিকটজনেরা প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন, সব সময়ের জন্য ওই তাঁর দেখভাল করতে একজন আয়া রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকারি অফিসার তদন্তে গিয়ে তেমন কাউকে দেখতে পাননি। এমনকী যে সব অভিযোগ উঠেছে, তার অনেকাংশেই সত্যি বলে সরকারি সূত্রের খবর।

ওই শিক্ষিকার ছেলে অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশকে ওই বৃদ্ধার ব্যাপারটি অবহিত করা হচ্ছে।’’ চন্দননগরের বাসিন্দা সমাজসেবী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসন ওই অসুস্থ শিক্ষিকার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আমরা আদালতকে বিষয়িটি জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন