টোটো বাতিল ঘিরে খণ্ডযুদ্ধে পুলিশ-চালক

প্রসঙ্গত, হাওড়া শহরে বেআইনি টোটোর সংখ্যা বেড়ে চলায় গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসন রাজ্য পরিবহণ দফতরের নির্দেশ মতো ই-রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০২:১৫
Share:

মারমুখী: টোটোর বদলে ই-রিকশা নয়, এই দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল টোটোচালকদের।

টোটোর পরিবর্তে ই-রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাওড়া জেলা প্রশাসন। তার প্রতিবাদে এ বার পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে গেলেন টোটোচালকেরা। টোটো বাতিল না করার দাবিতে বুধবার জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার সময়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠল হাওড়া ময়দান চত্বর। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাদের লক্ষ করে ইট ছোড়েন। অভিযোগ, ভাঙচুর চালানো হয় একটি বেসরকারি বাসে। শেষ পর্যন্ত দফায় দফায় লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে থাকে হাওড়া ময়দান, পঞ্চাননতলা রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে চার জনকে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, হাওড়া শহরে বেআইনি টোটোর সংখ্যা বেড়ে চলায় গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসন রাজ্য পরিবহণ দফতরের নির্দেশ মতো ই-রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। জারি হয় বিজ্ঞপ্তি। জানানো হয়, যে ডিলারদের ই-রিকশা বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁরাই বাতিল টোটোর নির্দিষ্ট মূল্য দেবেন। সরকারের তরফে গতিধারা প্রকল্পে ভর্তুকি দেওয়া হবে। ব্যবস্থা করা হবে ব্যাঙ্ক ঋণের।

পুলিশের অভিযোগ, ই-রিকশার বিজ্ঞপ্তি জারির পরে টোটোচালকদের একাংশ বিষয়টি মেনে নিলেও বাকিদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। এ দিনের বিক্ষোভ-কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দেওয়ার পিছনে তাঁরাই মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য এ দিন বেলা সওয়া ১১টায় দাশনগর থেকে কয়েক হাজার টোটোচালক মিছিল করে এসে পৌঁছন বঙ্কিম সেতুর নীচে মহাত্মা গাঁধী রোডে। পুলিশ মিছিল আটকালে সেখানেই বসে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সে সময়ে জেলাশাসক না থাকায় পাঁচ জনের প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যাওয়া হয় অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ লাটুয়ার কাছে। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরে টোটোচালকদের প্রতিনিধি ইমরান খান বলেন, ‘‘আমাদের দাবি উনি মানতে চাননি। প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, টোটো চলতে দেওয়া হবে না। ই-রিকশাই চলবে। তবে এ জন্য কিছুটা সময় বেশি পাওয়া যেতে পারে।’’


বিক্ষোভ সামলাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়াল পুলিশ। তার জেরে এমনই ধুন্ধুমার ছবি দেখা গেল হাওড়ায়। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

প্রশাসনের এই কড়া বার্তা দ্রুত পৌঁছে যায় মূল মিছিলের অবস্থানকারীদের কাছে। পুলিশ জানায়, চালকেরা প্রথমে উত্তেজিত হয়ে পড়লেও অশান্তিতে জড়াননি। সকলে ধীরে ধীরে হাওড়া ময়দানের দিকে ফিরে যাচ্ছিলেন। তখন আচমকাই পুলিশের গাড়িতে আধলা ইট এসে পড়ায় পিছনের কাচ ভেঙে যায়। এর পরেই লাঠি চালাতে শুরু করে পুলিশ। মুহূর্তে ধুন্ধুমার শুরু হয়ে যায় এলাকা জুড়ে। তাড়া খেয়ে পালিয়ে বিক্ষোভকারীরা পৌঁছন পঞ্চাননতলা রোডে। সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ করে উড়ে আসে ইট। ভাঙচুর চালানো হয় একটি বেসরকারি বাসে। আতঙ্কিত পথচারীরা দৌড়তে শুরু করেন। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ফের দ্বিতীয় দফায় লাঠি চালায় পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা বড় রাস্তা ছেড়ে আশপাশের গলিতে ঢুকে পড়লে পুলিশ সেখানে ঢুকেও লাঠিপেটা করে। প্রায় এক ঘণ্টা এ ভাবে চলার পরে রণে ভঙ্গ দেন বিক্ষোভকারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টোটোচালক অভিযোগ করেন, ‘‘এক-এক জন টোটোমালিক রয়েছেন যাঁদের ৬০০-৭০০ টোটো আছে। তাঁরাই এ দিন গোলমাল পাকিয়েছেন।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (উত্তর) ভাবনা গুপ্ত বলেন, ‘‘টোটোচালকদের একাংশ গোলমাল পাকিয়েছেন। তাঁদের চিহ্নিত করছি। এ দিনের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন