অকুস্থল: দুর্ঘটনার পর চলছে উদ্ধার কাজ। নিজস্ব চিত্র
বিজয়া দশমীর রাতে বলাগড়ে দুর্ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুর কথা তখন সবে ছড়াতে শুরু করেছে। তার মধ্যেই প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে, হুগলিরই ব্যান্ডেলের সাহাগঞ্জ এলাকায় আরও একটি দুর্ঘটনা। বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল তিন জনের। জখম হলেন ন’জন। ট্রাকটিকে পুলিশ আটক করলেও চালককে ধরতে পারেনি।
মৃতদের মধ্যে দু’জনের নাম-পরিচয় পুলিশ জানাতে পেরেছে। তাঁরা হলেন বাঁশবেড়িয়ার টোটো-চালক রঘুনাথ দাস (৫২) এবং ব্যান্ডেলের মলয় ভট্টাচার্য (৩৮) নামে এক বাইক আরোহী। মধ্য চল্লিশের মৃত তৃতীয় জনের নাম শনিবার বিকেল পর্যন্ত জানা যায়নি। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার জানিয়েছেন, ওই ট্রাকের চালক-মালিকের খোঁজ চলছে। চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ‘নো এন্ট্রি’ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ট্রাকটি ওই জায়গায় পৌঁছল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ১১টা নাগাদ কাচের বোতলবোঝাই ট্রাকটি জিটি রোড ধরে বেপরোয়া ভাবে চুঁচুড়ার দিক থেকে মগরার দিকে যাচ্ছিল। ব্যান্ডেল মোড়ের কাছে ট্রাকটি প্রথমে মলয়ের মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। মলয় গুরুতর জখম হন। তা দেখে আর এক মোটরবাইক আরোহী ট্রাকটির পিছু ধাওয়া করেন। চালক বিপদ বুঝে ট্রাকের গতি বাড়ায়। কেওটার কাছে পুলিশের গার্ডরেল সমেত এগোতে গেলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। উল্টো দিক থেকে আসা একটি গাড়িকে ধাক্কা মারে ট্রাকটি। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যাত্রীদের কিছু হয়নি। এরপর ট্রাকটি সাহাগঞ্জের কাছে পরপর দু’টি দোকানে, এক পথচারীকে এবং রঘুনাথবাবুর টোটোয় ধাক্কা মারে। রঘুনাথবাবু স্ত্রী, মেয়ে, দিদি-সহ পরিবারের ছ’জনকে নিয়ে ঠাকুর দেখে ফিরছিলেন।
কিন্তু তার পরেও ট্রাকটি থামেনি। একটি খাবারের দোকানের সামনে দাঁড় করানো একটি মোটরবাইকে ধাক্কা মারলে সেটি ট্রাকের নীচে আটকে যায়। ওই অবস্থায় ট্রাকটি বিকট আওয়াজ করে ডানলপে নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের লোহার খাঁচায় আটকে থামে। চালক গা-ঢাকা দেয়। উৎসবের রাতে কী ভাবে একটি ট্রাক ব্যান্ডেলের ওই জায়গায় বেপরোয়া ভাবে ঢুকে পড়ে প্রাণহানি ঘটাল তা নিয়ে ততক্ষণে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় ভিড়। ঘটনাস্থলেই মারা যান রঘুনাথবাবু এবং অজ্ঞাতপরিচয় ওই পথচারীর। আহতদের চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শনিবার ভোরে সেখানেই মলয় মারা যান।
দুর্ঘটনার পরপরই ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবিতে জিটি রোড অবরোধ করেন স্থানীয়রা। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ চলার পর এডিসিপি (ট্রাফিক) মৃণাল মজুমদার এবং আইসি নিরুপম ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে রাস্তায় ভাঙা টোটোর অংশ এবং গার্ডরেল-সহ নানা জিনিস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগে যায়।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সমীর দাস বলেন, ‘‘বেশ কিছু দূর থেকে ট্রাকটিকে বেপরোয়া ভাবে আসতে দেখে আমরা রাস্তা থেকে অনেকটাই দূরে গিয়েছিলাম। গাড়ির গতি দেখেই মনে হচ্ছিল, একটা অঘটন ঘটবে। তা-ই হল। মনে হয় চালক মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল।’’ রঘুনাথবাবুর স্ত্রী কাকলিদেবী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ডানলপের কাছে পিছন দিক থেকে একটা বিকট আওয়াজ পেয়ে স্বামী টোটোটা রাস্তার ধারে দাঁড় করবেন বলে ঠিক করছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে ট্রাকটা এসে পড়ল।’’