উন্নয়নের দাপটে পরিবেশের নাভিশ্বাস

গাছে কোপ, বন দফতর উদাসীন

আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় বেআইনিভাবে গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। খোদ বন দফতরের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে আরামবাগ, গোঘাটের ২টি ব্লক, খানাকুলের দুটি ব্লক এবং পুরশুড়া ব্লক এলাকায় অবৈধভাবে লক্ষাধিক গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু কাটা গাছের সিকি ভাগও লাগানো হয়নি।

Advertisement

পীযূষ নন্দী ও সুব্রত জানা

খানাকুল ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০১:২০
Share:

নিধন: রাস্তা চওড়া হবে তাই কাটা পড়ছে গাছ। সম্প্রতি উলুবেড়িয়ার হাটগাছায়। নিজস্ব চিত্র

সাড়ম্বরে হয়ে গিয়েছে বনমহোৎসব। হাওড়া-হুগলি দুই জেলা জুড়েই ছিল বৃক্ষরোপণের অনুষ্ঠান। স্কুলে, পাড়ার ক্লাবে, বিডিও অফিসে, প্রশাসনিক ভবনে সমারোহেই গাছ লাগানো হল, জল দেওয়াও হল তাতে। শপথ নেওয়া হয়েছে গাছ রক্ষার। কিন্তু এই দুই জেলাতেই বড় বড় গাছে কোপ পড়ছে অনবরত। অধিকাংশই বেআইনি ভাবে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাছ লাগানোর অনুষ্ঠান ঘিরে যতটা উন্মাদনা তার ছিটেফোঁটাও নেই গাছ বাঁচানোর বিষয়ে। প্রশাসন বা বন দফতর এ বিষয়েই একেবারেই চুপ।

Advertisement

আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় বেআইনিভাবে গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। খোদ বন দফতরের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে আরামবাগ, গোঘাটের ২টি ব্লক, খানাকুলের দুটি ব্লক এবং পুরশুড়া ব্লক এলাকায় অবৈধভাবে লক্ষাধিক গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু কাটা গাছের সিকি ভাগও লাগানো হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খানাকুল-১ ব্লকের পোল-২ পঞ্চায়েত এলাকার পাতুলে, পুরশুড়ার ভাঙামোড়া পঞ্চায়েতের খুশিগঞ্জ থেকে সোদপুর রাস্তার ধারে, আরামবাগের মায়াপুর-২ পঞ্চায়েতের ডিহিবয়রার শ্মশান, তিরোল, নৈসরাই ইত্যাদি এলাকা থেকে প্রচুর গাছ কাটার অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Advertisement

সপ্তাহ খানেক আগে বন দফতরের অনুমতি ছাড়াই খানাকুলের শাবলসিংহপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর থেকে বেআইনিভাবে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছিল হাসপাতাল রোগীকল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষে শাবলসিংহপুর পঞ্চায়েত প্রধান তথা তৃণমূল নেতা অমিয় কোলের নির্দেশে আগাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়া রাতারাতি টেন্ডার ডেকে গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। গাছ কাটায় বেনিয়মের কথা স্বীকার করেছিলেন অমিয়বাবুও। তাঁর বক্তব্য ছিল, “তড়িঘড়ি কাজটা করতে গিয়ে বন দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়নি।” ঘটনার তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন আরামবাগ চাঁদুর বনবিভাগের রেঞ্জ অফিসার শ্যামলকুমার মুখোপাধ্যায়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আর কোনও নাড়াচাড়া হয়নি।

রাস্তা তৈরির নামে সপ্তাহ খানেক আগে উলুবেড়িয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির হাটগাছায় বেশ কিছু দামি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দার জানিয়েছিলেন, বছর সাতেক আগে পঞ্চায়েতের ‘বন সৃজন’ প্রকল্পে এলাকার বেশ কিছু রাস্তার ধারে গাছ লাগানো হয়েছিল। কোপ পড়েছে সেই গাছেই।
প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। ঠিকাদার লাল্টু মোল্লার দাবি ছিল, জেলা পরিষদের তরফে চিহ্নিত করা গাছ কাটা হয়েছে। হাওড়া জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যর দাবি ছিল, ‘‘যদি কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ লিখিত অভিযোগ জানাননি কেউ। ফলে তদন্ত তো দূর।

তবে বন দফতরের উলুবেড়িয়া রেঞ্জ অফিসার উৎপল সরকারের কথায়, ‘‘অভিযোগ পেলেই তদন্ত করা হয়। আগে অনেক ক্ষেত্রেই দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতির সম্পাদিকা জয়িতা কুণ্ডু কুঁতি বলেন, ‘‘গাছ কাটা এখন একটা ব্যাধি। কোনও এলাকায় গাছ কাটা হচ্ছে দেখলে সকলেরই প্রতিবাদ করা উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসনের গাফিলতির বলি হচ্ছে গাছ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন