তৃণমূল কর্মী খুন, অবরোধ ৩ ঘণ্টা

ব্যবসার কাজ সেরে সকাল-সকাল মোটরবাইকে কল্যাণী থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু ফেরা হল না। বাড়ির কিছুটা আগেই ভরা রাস্তায় তাঁর পথ আটকাল দুষ্কৃতীরা। ধাক্কা মেরে ফেলে দিল বাইক থেকে। তিনি পালানোর চেষ্টা করেও বাঁচতে পারলেন না। ছুটে এল গুলি। একটি গুলি মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যেতেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মগরা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৯
Share:

দেহ আটকে অবরোধের জেরে ভোগান্তি। ছবি: তাপস ঘোষ

ব্যবসার কাজ সেরে সকাল-সকাল মোটরবাইকে কল্যাণী থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু ফেরা হল না। বাড়ির কিছুটা আগেই ভরা রাস্তায় তাঁর পথ আটকাল দুষ্কৃতীরা। ধাক্কা মেরে ফেলে দিল বাইক থেকে। তিনি পালানোর চেষ্টা করেও বাঁচতে পারলেন না। ছুটে এল গুলি। একটি গুলি মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যেতেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

Advertisement

চোদ্দো দিন পরে হুগলিতে ভোট। তার আগে শনিবার বাঁশবেড়িয়ার ঝুলোনিয়া মোড়ের কাছে এ ভাবেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়ে গেলেন তৃণমূল কর্মী শেখ আখতার আলি খান (৫৪)। যিনি পেশায় মাটি ব্যবসায়ী। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ লক্ষ্মণ মুদালিয়া নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করে। নিহত শাসক দলের কর্মী হওয়ায় ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রং। তৃণমূলের অভিযোগ, ভোটের মুখে বিরোধী দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ মানেনি।

এই খুনের পিছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ নেই বলেই মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তাঁদের ধারণা, পুরনো ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে শেখ আখতারকে খুন করা হয়েছে। হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে হুগলির নানা এলাকায় অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শেখ আখতার মগরার বোরো পাড়ার ৩ নম্বর গুমটি এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাটি সরবরাহের ব্যবসা করতেন। এ দিন ভোর ৬টা নাগাদ মোটরবাইক নিয়ে ব্যবসার কাজে কল্যাণী যান। ফিরে দলীয় কাজে বেরনোর কথা ছিল তাঁর। সেই কারণে সকাল ৮টায় ফিরছিলেন। ঈশ্বরগুপ্ত সেতু থেকে নামতেই জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকায়। তার পরে ওই কাণ্ড। ভরা রাস্তায় এ ভাবে কাউকে খুন হতে দেখে আতঙ্কে পথচারীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেন। অনেকে দ্রুত সরে যান। আশপাশের বাড়ির জানলা-দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সুযোগে দুষ্কৃতীরাও পালায়।

ঘটনার কথা চাউর হতেই শেখ আখতারের এলাকার লোকজন এবং তৃণমূল কর্মীরা ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে দেহ আটকে শুরু হয় অবরোধ। পুলিশের পদস্থ কর্তারা দেহ উদ্ধারে গিয়ে বাধা পান। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। অবরোধের জেরে ওই রাস্তায় যানজট হয়। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় চুঁচুড়া থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে পেরে নিহতের ছেলে বাবু আলি খান পুলিশের কাছে লক্ষ্মণ মুদালিয়া নামে এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে তাঁর বাবাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ মগরা এলাকা থেকে লক্ষ্মণকে ধরে।

বাবা যে এ ভাবে খুন হয়ে যাবেন তা ভাবতে পারছিলেন না বাবু আলি। তিনি বলেন, ‘‘বাবা বেশিরভাগ সময় নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। ভোট এসে যাওয়ায় সকালের দিকে ব্যবসার কাজ সেরে তারপর দলীয় কাজে বেরোতেন। কী কারণে কারা খুন করল, বুঝতে পারছি না।’’ তবে, নিহতের স্ত্রী জাইবুন বিবি বলেন, ‘‘ব্যবসার কাজে কোনও সমস্যা যে হচ্ছিল, তা ওঁর মনের অবস্থা দেখে আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু স্বামী মুখে কিছু বলতেন না।’’

শেখ আখতারের পরিবারের লোকজন রাজনীতির কথা না তুললেও তৃণমূলের অভিযোগ, ভোটের মুখে দলীয় কর্মীকে খুন করে এলাকায় সন্ত্রাসের চেষ্টা করছে বিরোধীরা। চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের দেবব্রত বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের বাঁশবেড়িয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক অনুপ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। ব্যবসায়িক কারণে খুন। তাতে রাজনীতির রং লাগিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে।’’ একই দাবি সপ্তগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী দিলীপ নাথেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন