গোলমাল: কনভেনশনের ব্যানার খুলে দিচ্ছে তৃণমূল। ছবি: মোহন দাস
ভাবাদিঘি নিয়ে অশান্তি এ বার পৌঁছল আরামবাগে। ফেস্টুন ছেঁড়া, মারধর থেকে আলোচনামঞ্চ ‘দখল’— কিছুই বাদ গেল না!
তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পে গোঘাটের ওই দিঘি নিয়ে জট কিছুতেই কাটছে না। দিনকয়েক আগেই কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, ভাবাদিঘির যে অংশ রেলকর্তারা এখনও হাতে পাননি, সেটা রেলের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সাহায্য করতে হবে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা যে নিজেদের অবস্থান থেকে সরছেন না সে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ‘ভাবাদিঘি বাঁচাও কমিটি’র নেতারা। রবিবার এ নিয়ে একটি মানবাধিকার সংগঠন নাগরিক কনভেনশন ডেকেছিল আরামবাগের রামমোহন হলে। সেখানেই শাসকদলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠল। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
ভাবাদিঘির পক্ষে-বিপক্ষে সাধারণ মানুষ যাতে মতপ্রকাশ করতে পারেন, সে জন্য এ দিন ওই আলোচনাসভা ডেকেছিল মানবাধিকার সংগঠনটি। এ নিয়ে সপ্তাহখানেক ধরে প্রচারও হয়। দুপুর দেড়টা নাগাদ সভা শুরু হয়। সেখানে ততক্ষণে দলবল নিয়ে হাজির গোঘাট-২ ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি সৈয়দ মকবুল হোসেন। প্রথম দু’জন বক্তা দিঘি বাঁচিয়ে রেলপথের পক্ষে সওয়াল করেন। তখন থেকেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা হইহল্লা শুরু করে দেন। তৃতীয় বক্তা ছিলেন গোঘাটের কানপুর গ্রামের কংগ্রেস কর্মী অসিত কোঁয়ার। তিনিও একই সওয়াল করে হলের বাইরে বেরোতেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর উপর হামলা করে বলে অভিযোগ। এর পরে হলে ঢুকে তাঁরা আরামবাগের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রভাত ভট্টাচার্য এবং উপস্থিত ভাবাদিঘির গ্রামবাসীদের হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। ভাবাদিঘির বাসিন্দারা হল ছেড়ে পালান। ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। এর পরে মাত্র কয়েক জনের উপস্থিতিতে তৃণমূল নেতাকর্মীরাই মঞ্চ ‘দখল’ করে ভাবাদিঘিতে রেল প্রকল্পের পক্ষে বক্তব্য পেশ করেন।
এই গোলমাল নিয়ে বিকেল পর্যন্ত অবশ্য থানায় কোনও অভিযোগ হয়নি। তবে, ওই মানবাধিকার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি অমিতদ্যুতি কুমারের ক্ষোভ, ‘‘অদ্ভূত ব্যাপার! মারধর করে, ফেস্টুন ছিঁড়ে তৃণমূলের লোকেরা মঞ্চও দখল করে নিল! আমাদের বক্তাদের বলতে দেওয়া হয়নি।’’ প্রহৃত অসিতবাবুর অভিযোগ, “আমি বলেছিলাম, আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা নিয়েই রেলপথ হোক। রেলপথটি এক অজ্ঞাত কারণে দিঘির উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এই বক্তব্যটা বোধহয় ওদের পছন্দ হয়নি। তাই মারধর করল।’’ কংগ্রেস নেতা প্রভাতবাবু বলেন, “আমরা কেউ রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে যাইনি। সুষ্ঠু আলোচনাটাই নষ্ট করে দিল ওরা।’’
‘ভাবাদিঘি বাঁচাও কমিটি’র সম্পাদক সুকুমার রায় বলেন, “হলে ঢোকার মুখে তৃণমূল নেতাকর্মীরা একপ্রস্থ বাধা দেয়। ভিতরে ঢুকেও তাণ্ডব করে। আমাদের লোকেরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল নেতা মকবুলের দাবি, ‘‘গোঘাটের সাধারণ মানুষ হিসেবেই গিয়েছিলাম। আন্দোলনের পক্ষে উস্কানিমূলক বক্তব্য শুনে সাধারণ মানুষই প্রতিবাদ করেছেন। আমরা কিছু করিনি।’’ গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদার বলেন, “দলের প্রতীক নিয়ে ওখানে কেউ ছিলেন না। যতদূর জানি, আয়োজক এবং হাজির থাকা সকলেই স্বাধীন বক্তব্য রাখতে পেরেছেন।’’