চন্দননগর নিয়ে জোড়া ঘোষণা

হুগ‌লিতে কমিশনারেট গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা চলছিল। বৃহস্পতিবার তাতেই সিলমোহর দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা জানান, শহরাঞ্চল নিয়ে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০৩:১৮
Share:

বৈঠক: —নিজস্ব চিত্র।

চারে দুই।

Advertisement

বৃহস্পতিবার হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে জেলার জন্য যে চারটি বড় প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার মধ্যে দু’টিই শহর চন্দননগরকে ঘিরে। পুলিশ কমিশনারেট এবং আলো-হাব।

হুগ‌লিতে কমিশনারেট গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা চলছিল। বৃহস্পতিবার তাতেই সিলমোহর দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা জানান, শহরাঞ্চল নিয়ে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট হবে। প্রশাসন সূত্রের খবর, নতুন কমিশনারেট হবে উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত গঙ্গার ধার ঘেঁষা ১০টি পুরসভা এবং ডানকুনি পুর-এলাকা নিয়ে। নাম চন্দননগর হলেও কমিশনারেটের সদর দফতর থাকবে চুঁচুড়াতেই।

Advertisement

বস্তুত শ্রীরামপুর শিল্পাঞ্চল, চন্দননগর, চুঁচুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য ইদানীং অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে নানা মহলের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন কল-কারখানাতেও সমস্যা রয়েছে। পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এলাকা অনুযায়ী পুলিশকর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল। কমিশনারেট হলে পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়বে। আইনশৃঙ্খ‌লার অবনতি হলে পরিস্থিতি বাগে আনা অনেকটাই সহজ হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। মমতার কথায়, ‘‘কমিশনারেট হচ্ছে মানে এখনই দু’হাজার চারশো কর্মী নিয়োগ করতে হবে।’’

সরকারি এই সিদ্ধান্তে পুলিশকর্তাদের মতো চন্দননগরের বিশিষ্ট মানুষেরাও আশার আলো দেখছেন। চন্দননগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কমিশনারেট হচ্ছে, এটা সুখবর। তবে প্রকৃত অর্থে পরিকাঠামোগত উন্নতি করা হোক।’’ প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণগোপাল চৌধুরীর মতে, ‘‘কমিশনারেট হলে আইনশৃঙ্খলার নিশ্চয়ই উন্নতি হবে।’’ শহরাঞ্চলকে নিয়ে কমিশনারেট হলেও হুগলির গ্রামীণ এলাকা রাজ্য পুলিশের আওতাতেই থাকছে।

এই বৈঠকেই চন্দননগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন শহরের আলোকশিল্পের উন্নতিতে হাব গড়ার প্রস্তাব দিতেই তা লুফে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভাল প্রস্তাব। চন্দননগরে আলো হাব নিশ্চয়ই হবে।’’ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরকে তখনই ওই প্রকল্প গড়ার নির্দেশও দেন মমতা।

এ শহরের আলোর খ্যাতি জগৎজোড়া। পুজোর মরসুম এলেই গোটা রাজ্যে তো বটেই, ভিন্ রাজ্য থেকেও ডাক পড়ে এ শহরের আলোক-শিল্পীদের। এলইডি আলোর কারিকুরিতে তাঁরা কখনও ফুটিয়ে তোলেন স্পাইডারম্যানের লাফ, কখনও ভালুকের ভায়োলিন বাজানো বা নানা ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরেই এই শিল্পীরা সরকারি সাহায্যের দাবি তুলছিলেন। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। ইন্দ্রলীন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন, প্রস্তাবিত হাবে একই সঙ্গে যেন আলোক-শিল্পের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও হয়। মমতা বলেন, ‘‘ওখানকার আলোকশিল্পীরা এত ভাল কাজ করেন। ওঁরাই প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন।’’

পরে ইন্দ্রনীল জানান, এক ছাদের তলায় আলোর কাজ থেকে প্রশিক্ষণ— সবই হবে। দেশ-বিদেশ থেকে লোক আসবেন। তাঁদের থাকার জন্য অতিথিশালা হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রস্তাব পাঠানো হবে। হাব হলে পরবর্তী প্রজন্মও উৎসাহিত হবে। নতুন প্রকল্প ঘিরে আশার আলো দেখছেন আলোকশিল্পীরা। তাঁদের মধ্যে বাবু পাল বলেন, ‘‘এখানকার আলোকশিল্পীরা এত দিন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। হাব হলে নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোন যাবে।’’ আর এক আলোকশিল্পী অসীম দে’র কথায়, ‘‘সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় নানা সমস্যা হয়। হাব হলে নিত্যনতুন আলোর আমদানি হবে। রোশনাই বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন