শ্যামপুরে চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা গড়লেন গ্রামবাসী

পঞ্চায়েত উদ্যোগী হয়নি। কিন্তু ভরা বর্ষায় বেহাল রাস্তায় চলাফেরা করতে নাকাল হচ্ছিলেন গ্রামবাসী। তাই নিজেরাই চাঁদা তুলে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে বছর পাঁচেক ধরে বেহাল শ্যামপুর-২ ব্লকের বাছরি পঞ্চায়েতের তালতলা থেকে সনমপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তাটি সংস্কার করলেন সম্প্রতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪১
Share:

পঞ্চায়েত উদ্যোগী হয়নি।

Advertisement

কিন্তু ভরা বর্ষায় বেহাল রাস্তায় চলাফেরা করতে নাকাল হচ্ছিলেন গ্রামবাসী। তাই নিজেরাই চাঁদা তুলে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে বছর পাঁচেক ধরে বেহাল শ্যামপুর-২ ব্লকের বাছরি পঞ্চায়েতের তালতলা থেকে সনমপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তাটি সংস্কার করলেন সম্প্রতি। স্কুল পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ— সকলেই হাত লাগিয়েছিলেন সেই কাজে।

পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বুথের সদস্য বামফ্রন্টের। তাদের অভিযোগ, তাদের দখলে বুথটি রয়েছে বলেই পঞ্চায়েত রাস্তাটি সারাতে উদ্যোগী নয়। মুখ্যমন্ত্রী যখন সার্বিক উন্নয়নের কথা বলছেন, তখন এখানে এই অবস্থা কেন? ওই এলাকার বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েতের শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য সঞ্চালক স্বপন ভক্তাও জানান, তিনি রাস্তাটি সংস্কারের জন্য একাধিকবার পঞ্চায়েতে তদ্বির করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। পঞ্চায়েত প্রধান কান্তা মান্নার দাবি, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমাদের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে ওই রাস্তার কথা বলা হয়েছে। এক এক করে সব এলাকারই কাজ হবে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জুলফিকার আলি মোল্লারও দাবি, ‘‘অভিযোগ ঠিক নয়। গুরুত্বের ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে।’’ বিডিও সুদীপ্ত সাঁতরা বলেন, ‘‘এমন ঘটনা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

Advertisement

রাস্তার অনেক জায়গাই ভেঙে গিয়েছিল। ইট উঠে এবড়ো-খেবড়ো হয়ে যায়। বর্ষায় তৈরি হয় বিপজ্জনক পরিস্থিতি। অথচ, রাস্তাটি দেওড়া, সনমপুর, ওসমানপুর-সহ কয়েকটি ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ব্যবহার করেন। এই রাস্তা দিয়ে যেতে হয় দেওড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, দেওড়া-২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দেওড়া হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। এ ছাড়া, ওই এলাকায় একটি শীতলামন্দির রয়েছে, যেখানে প্রচুর লোক পুজো দিতে যান।

বাসিন্দাদের বক্তব্য, এটি এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কিন্তু ২০০৮ সালে শেষ বার সংস্কার হয়েছিল। কয়েক বছর ঠিক থাকার পর তা খারাপ হয়ে যায়। পঞ্চায়েত রাস্তা না সারানোয় বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেরাই রাস্তা সারাবেন। এর জন্য চাঁদা তুলতে শুরু করেন তাঁরা। স্কুলপড়ুয়ারাও সামিল হয়। মোট ২০ হাজার টাকা চাঁদা ওঠে। এর পর স্থানীয় একটি ইটভাটার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা হয় ইটগুঁড়োর।

সম্প্রতি ৭০-৮০ জন গ্রামবাসী কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়েন। শ্রীকান্ত সাঁতরার মতো ব্যবসায়ী, রবিরাম মণ্ডলের মতো দিনমজুর কিংবা আইনজীবী সুদীপ ঘোষ—সকলেই যে যাঁর সাধ্যমতো রাস্তা সারানোর কাজে হাত লাগান। মাথায় ইট বয়ে আনতে দেখা গিয়েছে সুরজিৎ খাঁড়া, শুভ চক্রবর্তী, সন্ন্যাসী বেরা, কৌস্তুভ ঘোষের মতো ছোট স্কুলপড়ুয়ারাও। পঞ্চায়েতের বাম সদস্য সঞ্জয় ধাড়া বলেন, ‘‘বহু বারই প্রধান, উপ-প্রধানকে সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কেউই কর্ণপাত করেননি।’’ গ্রামবাসী রবিরাম মণ্ডলের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত কিছু না করলে আমরা তো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। তাই নিজেরাই রাস্তা বানালাম। একটু কষ্ট হল এই যা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন