গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে কার্যত উবে গিয়েছে হাওড়া জেলা পরিষদের ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল। খাতায় কলমে অস্তিত্ব থাকলেও, বাস্তবে কোনও কাজই করছে না কাউন্সিল। অথচ জেলা পরিষদে শাসক দলকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কাউন্সিল-এর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্সিলের সদস্যরা শাসক দলের মধ্য থেকে নির্বাচিত হলেও মাথায় থাকেন বিরোধী দলনেতা। জেলা পরিষদ, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির কাজকর্মের উপরে কাউন্সিল নজরদারি চালায়। জেলা পরিষদের অডিট রিপোর্ট বা অন্য কাজকর্ম নিয়ে যদি কোনও অভিযোগ জমা পড়ে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার ক্ষমতা দেওয়া আছে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলকে।
হাওড়া জেলা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে ছিল বামফ্রন্টের হাতে। সেইসময় ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের অধ্যক্ষ পদটি ছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলের হাতে। ২০১২ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের অপর্ণা পুরকায়েতকে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের অধ্যক্ষ করা হয়। কাউন্সিলের বাকি ছয় সদস্য তৃণমূলের।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত কাউন্সিল ভাল কাজ করে। মাসে দুটি করে বৈঠক হতো কাউন্সিলের। ওই বৈঠকে কোন গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি পরিদর্শন করা হবে তার তালিকা তৈরি হতো। পরের বৈঠকে পরিদর্শনের রিপোর্ট এবং সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হতো। সেইসব সুপারিশ তুলে দেওয়া হতো অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত)-এর হাতে। এইভাবে জেলার মোট ১৪টি পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিটিতে দুবার করে পরিদর্শন করে কাউন্সিল। ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশতেই পরিদর্শন করা হয়।
কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে কাউন্সিলের কাজে ভাটা পড়ে। উল্লেখ্য, কাউন্সিলের উপাধ্যক্ষ হলেন তৃণমূলের সরোজ কাঁড়ার। গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি উদয়নারায়ণপুরে দলীয় প্রার্থী সমীর পাঁজার বিরুদ্ধে নির্দল প্রাথী হয়ে দাঁড়ানোয় তাঁকে দল বহিষ্কার করে। উপাধ্যক্ষ পদ থেকে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। এর জেরে সরোজবাবু-সহ কাউন্সিলের একাধিক তৃণমূল সদস্য বৈঠকে আসা বন্ধ করে দেন। কাউন্সিলের অধ্যক্ষ অপর্ণা পুরকায়েত বলেন, ‘‘এমন ঘটনাও ঘটেছে যে বৈঠকে গিয়ে দেখেছি আমি একা। বাকিরা আসেননি। এখন তো আর কাউন্সিলের বৈঠক ডাকাও হয় না।’’
উল্লেখ্য, সরোজবাবুকে তৃণমূল পদত্যাগ করতে বললেও, তিনি এখনও তা করেননি। ফলে উপাধ্যক্ষ পদে নতুন করে কাউকে নির্বাচন করা হয়নি। রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, পঞ্চায়েত আইনেই ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল গঠনের কথা বলা রয়েছে। শাসক দল যাতে যেমন খুশি কাজ না করতে পারে তার জন্যই অধ্যক্ষ হিসাবে বিরোধী দলনেতাকে রাখা হয়। আইনেও তা নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু যদি কাউন্সিল ঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে শাসকদলের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ থাকে। এখন পঞ্চায়েতে বরাদ্দ অনেকটা বেড়েছে। ফলে এই নজরদারি আরও বেশি করে দরকার।
প্রসঙ্গত, কাউন্সিলের বৈঠক ডাকার কথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত)-এর। কী বলছেন তিনি? অতিরিক্ত জেলাশাসক শঙ্করপ্রসাদ পাল বলেন, ‘‘অধ্যক্ষই বৈঠকের তারিখ ঠিক করেন। সেই তারিখ অনুযায়ী আমি বৈঠক ডাকি। দুটি বৈঠক ডেকেছিলাম। কেউ আসেননি। পরে অধ্যক্ষ আর আমাকে বৈঠক ডাকার জন্য বলেননি।’’