পরচুলা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। ছবি: সুব্রত জানা।
টান পড়েছে পরচুলায়।
তাতেই টাকের সাজ মাথায় ওঠার জোগাড়। যা বিপাকে ফেলে দিয়েছে বাণীবনের পরচুলা শিল্পকে। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার এই অঞ্চল পরচুলা তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ। এখানকার তৈরি পরচুলার কদর রয়েছে বিদেশেও। পরচুলা বিক্রির টাকায় পেট চলে বাণীবনের অন্তত হাজার মানুষের। কিন্তু গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই অন্ধকার দেখতে শুরু করেছে এই শিল্প। নগদের টানে কমেছে বরাত। ফলে কাজ কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
শুধু বিভিন্ন শহরের দোকানেই নয়, এখানকার পরচুলা বিক্রি হয় টলিউডেও। বিভিন্ন সিরিয়াল ও সিনেমায় ব্যবহার করা হয় বাণীবনের পরচুলা। কিন্তু নোট-কাণ্ডের প্রভাব সেখানেও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, বছর পঞ্চাশ আগে বাণীবনে পরচুলা তৈরির ব্যবসা শুরু করেছিলেন প্রয়াত পিয়ার আলি। তিনি মুম্বই থেকে এই কাজ শিখে আসেন। তারপরে এখানে কারখানা তৈরি করেন। উত্তমকুমার তো বটেই, বিকাশ রায়, পাহাড়ি সান্যাল, ছবি বিশ্বাস, অনুপকুমারের মতো নায়ক ও অভিনেতাদের ছবির প্রয়োজনে পরচুলার প্রয়োজন মেটাতেন পিয়ার। তাঁর মৃত্যুর পর সেই ব্যবসাকে আরও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলেন দুই ছেলে দিলওয়ার ও আলি হোসেন শেখ। ৫০টির মতো পরচুলা তৈরির কারখানা রয়েছে এখানে। একেকটি কারখানায় গড়ে ১০ জন কারিগর কাজ করেন।
চুল আসে তিরুপতি মন্দির থেকে। এছাড়াও মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ থেকেও চুল আসে। কেনা চুল পরিষ্কার করে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় পরচুলা। একেকটি পরচুলার দাম তিন থেকে বাইশ হাজার টাকা।
দিলওয়ার বলেন, ‘‘নতুন অনেক সিরিয়ালের কাজ শুরু করা যায়নি নোট কাণ্ডের জেরে। তাই আমাদের বরাতও কমে গিয়েছে।’’ মাসে প্রায় এক লক্ষ টাকার ব্যবসা করতেন এমন একটি কারখানার মালিক সেকেন্দার আলি বলেন, ‘‘নোট কাণ্ডের পরে নতুন বরাত আসছে না। গত একমাসে ৩০ হাজার টাকার বেশি ব্যবসা হয়নি। কারিগরদের পাওনা মেটাতেও সমস্যা হচ্ছে।’’ আর এক মালিকের কথায়, ‘‘এমন অবস্থা চললে চাষের কাজে নামতে হবে। পেট চালাতে হবে তো! ’’
নোট-কাণ্ডে পরচুলায় নয়, টান পড়েছে পেটেও।