সংসার বাঁচাতে টোটো নিয়ে পথে মীরাদেবী

স্বামী ও দুই ছেলে দিনমজুর। সংসারের হাল ফেরাতে ঋণ নিয়ে আর এক ছেলেকে টোটো কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাবতে পারেননি। একদিন তাঁকেই সংসার টানতে টোটোর হাল ধরতে হবে।

Advertisement

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪৩
Share:

মীরা হেলা। —নিজস্ব চিত্র।

স্বামী ও দুই ছেলে দিনমজুর। সংসারের হাল ফেরাতে ঋণ নিয়ে আর এক ছেলেকে টোটো কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাবতে পারেননি। একদিন তাঁকেই সংসার টানতে টোটোর হাল ধরতে হবে।

Advertisement

চন্দননগরের কলুপুকুর কবরস্থানের বাসিন্দা বছর ৫৪-র মীরা হেলা সকাল থেকেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। দুপুরে এক প্রস্থ বিশ্রাম নিয়ে ফের বিকেল থেকে নেমে পড়েন। সংসার ফেলে টোটো চালাতে সমস্যা হয়নি? প্রশ্ন শুনে একটু চুপ থেকে বলেন, ‘‘ভাগ্যের ফের। তিন ছেলে-বৌমা, নাতি-নাতনি নিয়ে ১০ জনের পরিবার। স্বামী ও দুই দিনমজুর ছেলের আয়ে এতবড় সংসার চলে? তাই দেনা করে মেজ ছেলেকে টোটো কিনে দিয়েছিলাম। বেশ চলছিল। কিন্তু গত বছর কালীপুজোর পরেই কেমন যেন সব ওলটপালট হয়ে গেল।’’ একটু থেমে ফের শুরু করেন, ‘‘টোটা দুর্ঘটনায় ছেলের পা দুটো মারাত্মক জখম হল। ডাক্তার বলেছে অপারেশন করতে লাখখানেক টাকা খরচ হবে। দিন আনা দিন খাওয়ার সংসারে এত টাকা কোথায় পাব। তার উপর টোটো না চলায় অবস্থা আরও খারাপ হতে বসেছিল। তাই এ ছাড়া উপায় ছিল না।’’

আর দুই ছেলের একজনকে চালাতে বলতে পারতেন। কথা শেষ হতেই উত্তর এল, ‘‘ওদের বলেছিলাম। কিন্তু ওরা বলল ভয় লাগে। তাই আর সাতপাঁচ ভাবিনি। তবে প্রথম প্রথম অনেকে অবাক চোখে দেখত। কিন্তু আমার সমস্যা কি অন্যরা বুঝবে!’’

Advertisement

তবে চন্দননগরে একমাত্র মহিলা টোটোচালক হিসাবে ইতিমধ্যেই বেশ পরিচিত মীরাদেবী।

স্বামী মোহন হেলা বলেন, ‘‘আমার ও দুই ছেলের রোজগারে এতবড় সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ও টোটো চালাবে বলায় প্রথমে বেশ ভয় পেয়েছিলাম। কারণ ওঁরও তো বয়স হয়েছে। কিন্তু জোর করেই ও এই কাজে নেমে পড়ল। তাতে কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। সংসারের জন্য ওর এই লড়াই আরও অনেককে উৎসাহ দেবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement