প্রতীকী ছবি।
আয় নেই এক পয়সা। কিন্তু খরচ হাতি পোষার মতো।
হাওড়া জেলার পাঁচটি কিসান মান্ডি থেকে নয়া পয়সাও ঢুকছে না হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির তহবিলে। অথচ, জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। ফলে, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মান্ডির তত্ত্বাবধানে থাকা কৃষি বিপণন দফতরের অধীনস্থ বাজার সমিতির কর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, খরচের বহর সামলাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁদের বেতনে কোপ পড়তে পারে। বছর তিনেক আগে হাওড়া জেলায় পাঁচটি মান্ডিটাকা। অর্থাৎ, পাঁচটি মান্ডির জন্য মাসে ৭৫ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল মেটাচ্ছে বাজার সমিতি। স্টলগুলি বিলি করা হলেও স্টলমালিকদের থেকে ভাড়ি নেওয়া হচ্ছে না। কর্মীরা বলছেন, ‘‘ভাড়া নেওয়া হলে সেই টাকায় বিদ্যুতের বিল মেটানো যেত। মান্ডির রক্ষণাবেক্ষণের খরচও উঠে আসত। তারপরেও উদ্বৃত্ত টাকা বাজার সমিতির তহবিলে জমা পড়ত। কিন্তু তা না-হওয়ায় বিদ্যুতের বিল এবং রক্ষণাবেক্ষণের খাতে বাজার সমিতির তহবিল থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা করে বেরিয়ে যাচ্ছে।’’
কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের একাংশ অবশ্য জানিয়েছেন, স্টল বিলি হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত বাগনান ছাড়া কোথাও বাজার চালু হয়নি। ফলে, স্টলগুলি যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা খুলতে চাইছেন না। ফলে, তাঁদের থেকে ভাড়াও নেওয়া যাচ্ছে না। যদিও কর্মীদের একাংশের পাল্টা প্রশ্ন, বাগনান মান্ডির স্টলমালিকদের থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না কেন। তাঁদের অভিযোগ, মান্ডিগুলি চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের স্পষ্ট কোনও নীতি নেই।
একটা সময়ে বাজার সমিতির বিপুল আয় হত। বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উৎপাদক সংস্থার থেকে তারা ‘লাইসেন্স ফি’ এবং বিপণন ‘সেস’ আদায় করত। সেই টাকা জমা পড়ত সরকারি কোষাগারে। ওই অর্থে কর্মীদের বেতন ছাড়াও নানা উন্নয়নমূলক কাজ হত। কিন্তু নতুন কৃষি আইন পাস হওয়ার পরে কৃষিপণ্য উৎপাদক সংস্থাগুলি ‘সেস’ দেওয়া বন্ধ করেছে। এখন ‘লাইসেন্স ফি’-ই বাজার সমিতির আয়ের একমাত্র উৎস। কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, পুরনো তহবিলে যা টাকা আছে, তাতে এখনই হয়ত তাঁদের বেতনে টান পড়বে না। কিন্তু ‘সেস’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে সমিতির ভাঁড়ারে টান পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে মান্ডিগুলি চালানোর জন্য এই ভাবে খরচ করা হলে পরে পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে পড়বে। কর্মীদের বক্তব্য, মান্ডিগুলি চালু করে বাজার সমিতি আয় বাড়াক। তা না-হলে, মান্ডিগুলির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অর্থ সাশ্রয় করা হোক। বাজার সমিতির কর্মী সংগঠনের জেলা সভাপতি আনন্দরূপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছি। এ ভাবে টাকা অপব্যয় হলে আমাদের বেতনে টান পড়তে পারে।’’ রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই সমস্যা শুধু হাওড়ায় হয়, বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। যাঁরা স্টল নিয়েছেন, তাঁদের ভাড়া দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ফের চিঠি ধরানো হবে।’’