হাত বাদ শ্রমিকের, ক্ষতিপূরণের দাবি

কর্মরত অবস্থায় যন্ত্রে ডান হাত কাটা গিয়েছে এক শ্রমিকের। তাই যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোমবার রাত থেকে কাজ বন্ধ করে দিলেন ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর নর্থ জুটমিলে তাঁর সহকর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

কর্মরত অবস্থায় যন্ত্রে ডান হাত কাটা গিয়েছে এক শ্রমিকের। তাই যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোমবার রাত থেকে কাজ বন্ধ করে দিলেন ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর নর্থ জুটমিলে তাঁর সহকর্মীরা। মঙ্গলবারও সারাদিন কাজ হয়নি। ফলে, ব্যাহত হয় উৎপাদন।

Advertisement

কিশোর পাসোয়ান নামে মধ্য ত্রিশের আহত ওই শ্রমিকের ডান হাতটি কব্জির কিছুটা উপর থেকে কাটা পড়ে। রাতভর তিনটি হাসপাতালে ঘুরে মঙ্গলবার ভোরে কিশোরকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান শ্রমিকেরা। তাঁরা কাটা হাতটি জুড়ে দেওয়ার দাবিও তোলেন। কিন্তু তা হয়নি।

জুটমিলের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই শ্রমিকের আগে যথাযথ চিকিৎসার প্রয়োজন। মিলের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের দাবি নিয়ে পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ, এর আগেও একাধিক দুর্ঘটনার সময়ে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েও মিল

Advertisement

কর্তৃপক্ষ তা দেননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশোর জুটমিলের ‘তাঁতঘর’ বিভাগে কাজ করেন। সোমবার রাতের শিফ্‌টে কাজ করার সময়ে একটি যন্ত্রে তাঁর ডান হাতটি কোনও ভাবে ঢুকে যায়।

কিছু ক্ষণের মধ্যেই কব্জির কিছুটা উপর থেকে হাতটি কেটে মেঝেতে পড়ে যায়। কিশোর লুটিয়ে পড়েন। তাঁর আর্তনাদে অন্য শ্রমিকেরা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। মিল কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কথা জানানো হয়। এর পরে মিলেরই অ্যাম্বুল্যান্সে কাটা হাত-সহ কিশোরকে প্রথমে চন্দননগরের গৌরহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কিশোরের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। কিন্তু সেখানেও কাটা হাত জোড়া দেওয়া যায়নি। এর পরে এসএসকেএম এবং শেষে, মঙ্গলবার সকালে কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় কিশোরকে। সেখানে কিশোরের ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু হাতটি আর জোড়া দেওয়া যায়নি।

এর পরেই মিল কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণের জোরালো দাবি তোলেন অন্য শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের আশঙ্কায় মিলে পুলিশ পিকেট বসানো হয়। মিল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও কিশোর আর ক্ষতিপূরণ পাবেন না এবং তাঁকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়াও হতে পারে বলে শ্রমিকদের আশঙ্কা। তাঁদের অভিযোগ, জুটমিলে এমন দুর্ঘটনার পরে শ্রমিককে বসিয়ে দেওয়ার নজির রয়েছে।

শ্রমিকদের পক্ষে বীরেন্দ্র সাউ বলেন, ‘‘কর্মরত অবস্থায় কিশোরের এতবড় একটা ক্ষতি হয়ে গেল। ক্ষতিপূরণ দেওয়া না-হলে পরিবারটি সমস্যায় পড়বে।’’

মিলের বাম শ্রমিক নেতা অর্জুন তিওয়ারি বলেন, ‘‘আহতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের দাবিতেই কাজ বন্ধ করেছেন শ্রমিকরা। আগেও দুর্ঘটনাগ্রস্ত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েও মিল কর্তৃপক্ষ কিছু করেননি। এ বার কিশোরের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য না-দেওয়া পর্যন্ত শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবেন না।’’

কিশোর আদতে বিহারের বাসিন্দা। ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাসে শ্রমিক মহল্লায় স্ত্রী, শিশুকন্যা এবং বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন। তাঁর মা সুষমাদেবী বলেন, ‘‘ছেলের রোজগারেই সংসার চলে। কাজে গিয়ে ও হাত হারাল। এর পরে কী হবে জানি না। বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না হলে সংসারটা ভেসে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন