ধৃত রাজীব সাহা ওরফে রাজু।
রাতে বাড়ি ফেরার সময় এক রংমিস্ত্রিকে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে হুগলির ত্রিবেণীর শিবপুরে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত রাজীব সাহা ওরফে রাজুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মনোজিৎ সমাদ্দার (৩৬) আদতে দুর্গাপুরের বাসিন্দা। কাজের সূত্রে বছর কয়েক ধরে তিনি স্ত্রী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে ত্রিবেণীতে ভাড়া ছিলেন। তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে ওই ঘটনা ঘটেছে। ধৃত রাজু ঠিকা শ্রমিক সরবরাহের কাজ করে। শিবপুরেই শঙ্করবাগানে ভাড়া থাকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মনোজিৎ ত্রিবেণি কালীবাড়ি এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত পৌনে দশটা নাগাদ সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে শিবপুর বালিখাদ এলাকায় রাস্তার মোড়ে রাজু তাঁর পথ আগলে দাঁড়ায়। খুব কাছ থেকে মনোজিৎকে গুলি করে সে। গুলি লাগে মনোজিতের বুকে। গুলির শব্দে স্থানীয় লোকজন বেরিয়ে এলে রাজু পালায়। রক্তাক্ত অবস্থায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মনোজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে মগরা থানার ওসি দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তল্লাশির সময় ত্রিবেণী স্টেশনের কাছে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রাজু।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক বাসিন্দা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারই ভিত্তিতে রাজুর বিরুদ্ধে খুন এবং অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বুধবার চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ওয়ান-শটার থেকে মনোজিৎকে গুলি করা হয়। বুধবার ধৃতকে চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচদিনের পুলিশ হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশের দাবি, জেরায় রাজু খুনের কথা কবুল করেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অভিযুক্তের সঙ্গে নিহতের স্ত্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হয়। এ দিন পুলিশ নিহতের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের দাবি, ওই মহিলা জানিয়েছেন এক সময় শিবপুরে তাঁদের সঙ্গে একই বাড়িতে ভাড়া থাকত রাজু। তখনই তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়। এর পরে রাজু তাঁকে কয়েকবার কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। পরে রাজু অন্য বাড়িতে ভাড়া চলে যায়। কিন্তু তারপরেও তাঁকে উত্যক্ত করত। সেই সময় তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে রাজু একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক তৈরিতে বাধ্য করে বলে মহিলার অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, প্রথম দিকে লজ্জা এবং ভয়ে কাউকে কিছু জানাতে পারেননি। পরে স্বামীকে সব খুলে বলেন। দিন কয়েক আগে তাঁর সঙ্গে এই নিয়ে রাজুর ঝগড়াও হয়। তিনি বলেন, ‘‘রাজু মাঝেমধ্যেই আমাকে হুমকি দিত। মঙ্গলবারও ফোনে হুমকি দিলে ওকে বলি কোনওভাবেই স্বামীর কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না। সেই রাগেই হয়তো ওকে একেবারে শেষ করে দিল। আমি চাই ওর কঠোর শাস্তি হোক।’’
জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। খুনের জন্য কোথা থেকে রাজু আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করল তাও জানার চেষ্টা হচ্ছে।