আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভারতের জনপ্রিয় অনলাইন গেমার পায়েল ধারে। তাঁকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে নেটপাড়ায়। গুগ্লে সার্চ চলছে নিরন্তর। তবে গেমিং সংক্রান্ত কোনও কারণ নয়, পায়েলকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ভাইরাল একটি এমএমএস বিতর্কের জেরে।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এ ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল ম্যাচে মাঠে থাকার সময় পায়েলের একটি ছবি ভাইরাল হয়। ‘ভাইরাল কন্যা’ হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। এর পরই সূত্রপাত হয় বিতর্কের।
পায়েলের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। সেই এমএমএস ভিডিয়োয় এক তরুণীর অন্তরঙ্গ এবং ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ধরা পড়েছিল। সেই ভিডিয়োয় দাবি করা হয়েছিল, ভিডিয়োয় যে তরুণীকে দেখা যাচ্ছে তিনি পায়েল এবং দুবাইয়ে থাকাকালীন গেমারের এই ঘনিষ্ঠ ভিডিয়ো ক্যামেরাবন্দি করা হয়।
ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে। ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয় সেই ভিডিয়ো। বিতর্ক তৈরি হয়। ভিডিয়োটি হাতে পেতে খোঁজখবর চালান নেটাগরিকদের একাংশ। অনেকে ভিডিয়োটির একটি কপি পেতে হাজার হাজার টাকা দিতেও রাজি ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে পায়েল প্রথমে মুখ না খুললেও সরব হন তাঁর অনুরাগীরা। ভিডিয়োটি ডিপফেক এবং কৃত্রিম মেধা (এআই)-র সাহায্যে তৈরি বলে দাবি করেন তাঁরা। অনেক অনলাইন গেমারও পায়েলের সমর্থনে দাঁড়ান। অনেকে ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেন।
একাধিক সংবাদমাধ্যম এবং ডিজিটাল বিশেষজ্ঞও তথ্য যাচাই করে জানিয়েছেন ভিডিয়োটি এআই দিয়ে তৈরি এবং এর সঙ্গে পায়েলের কোনও সম্পর্ক নেই। এর পর বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন পায়েল।
বুধবার ইনস্টাগ্রামে একটি বিস্তারিত বিবৃতি জারি করেছেন পায়েল। সেই বিবৃতিতে তিনি স্পষ্ট করেছেন, ভাইরাল ভিডিয়োয় যাঁকে দেখা যাচ্ছে, সেই তরুণী তিনি নন। ভিডিয়োটিকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে তা ‘দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পায়েলের কথায়, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে অনলাইনে আমার নাম এবং ছবি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করা একটি ভিডিয়োর সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। আমি স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, ওই ভিডিয়োর মানুষ আমি নই। এর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
জনসাধারণকে ওই ভিডিয়ো শেয়ার করা বা ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকার আবেদনও জানিয়েছেন পায়েল। পায়েল বলেছেন, ‘‘আমার নাম এবং ছবির অপব্যবহার করা রুখতে আইন অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
২০০০ সালে মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া জেলার একটি গ্রামে জন্ম পায়েলের। ছত্তীসগঢ়ের ভিলাইয়ের একটি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই গেমিংয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল পায়েলের। ভাইবোনদের সঙ্গে ভিডিয়ো গেম খেলার পর থেকেই গেমিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েন তিনি।
তবে গেমিং জগতে পা দেওয়ার সময় প্রথমে পরিবারের সমর্থন পাননি পায়েল। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ভারতীয় গেমার বলেছিলেন, ‘‘আমি এমন জায়গা থেকে এসেছি যেখানে মেয়েরা ভিডিয়ো গেম খেলবে সেটাই লোকে মেনে নিতে পারতেন না। আমার মা-ও প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাবা সব সময় আমার পাশে ছিলেন।’’
২০১৯ সালে ইউটিউবে গেমার হিসাবে যাত্রা শুরু পায়েলের। তাঁর চ্যানেলের নাম ‘পায়েল গেমিং’। ‘জিটিএ ফাইভ’, ‘পাবজি’ এবং ‘বিজিএমআই’-এর মতো জনপ্রিয় গেম খেলার লাইভ স্ট্রিমিং করে গেমিং ইন্ডাস্ট্রির এক জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসাবে দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
২০২৩ সালে ‘ডায়নামিক গেমিং ক্রিয়েটর’ হিসাবেও পুরস্কৃত হন পায়েল। এমনকি সেই বছর ‘ফিমেল স্ট্রিমার’-এর পুরস্কারও তাঁর কেরিয়ারে সাফল্যের পালক হিসাবে যুক্ত হয়। ২০২৪ সালে ‘গেমিং ক্রিয়েটর অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পান তিনি।
কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতীয় গেমিং জগতের বিশিষ্ট মুখ হয়ে ওঠেন পায়েল। পায়েল ভারতের শীর্ষ গেমিং সংস্থা ‘এস৮ইউএল ইস্পোর্টস’-এর সঙ্গেও যুক্ত। প্রায়শই বিভিন্ন গেমিং ইভেন্টে যোগ দেন পায়েল।
ভারতে গেমিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে গত বছর দেশের অনলাইন গেমারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গেমারদের সঙ্গে সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন অনিমেষ আগরওয়াল, মিথিলেশ পতঙ্কর, তীর্থ মেহতা, নমন মাথুর-সহ অনেকেই। তবে আলাদা ভাবে নজর কেড়েছিলেন পায়েল।
আলোচনার পর নিজের ইনস্টাগ্রামের পাতায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন পায়েল। গেমিংকে কেরিয়ার হিসাবে বেছে নিলে তার ভবিষ্যৎ কী, গেমাররা তাঁদের কেরিয়ারে কী ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং ভারতীয় পুরাণের উপর ভিত্তি করে তৈরি গেমগুলি ভারতের বাজারে কতটা প্রভাব ফেলছে, প্রধানমন্ত্রী সে সব নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে পায়েলের উপস্থিতি নজর কাড়ার মতো। অনুরাগীদের সংখ্যাও ঈর্ষণীয়। ইউটিউবে পায়েলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৪৫ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।
ইউটিউবের গেমিং চ্যানেলের পাশাপাশি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিয়ো পোস্ট করার জন্যও আলাদা একটি চ্যানেল রয়েছে পায়েলের। ইউটিউবে পায়েলের যে দ্বিতীয় চ্যানেলটি রয়েছে সেখানেও সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ছ’লক্ষের বেশি।
ইউটিউবের পাশাপাশি অন্য সমাজমাধ্যমেও জনপ্রিয় পায়েল। ইনস্টাগ্রামে পায়েলের অনুগামীর সংখ্যা ৪৫ লক্ষের বেশি। ফেসবুকেও তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা অনেক।
গেমিংয়ের পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবসাও চালান পায়েল। স্যামসাং, ওয়ানপ্লাস এবং আরও অনেক সুপরিচিত ব্র্যান্ডের সঙ্গেও কাজ করেছেন এই জনপ্রিয় গেমার।
গেম খেলে অনেক আয়ও করেন পায়েল। ইউটিউবে গেম খেলার স্ট্রিমিং করে মাসে ১০ লক্ষ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা উপার্জন করেন তিনি। অর্থাৎ, প্রতি বছর ইউটিউব থেকে আয় করেন এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া অন্যান্য সমাজমাধ্যম থেকেও বহু টাকা আয় করেন পায়েল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পায়েলের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০ কোটিরও বেশি।