দীপক বেহরা। নিজস্ব চিত্র
সচেতনতা ফিরছে না, থামছে না দুর্ঘটনায় মৃত্যুও।
কানে মোবাইল নিয়ে রাস্তা পেরোনো বা হেডফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন পারাপার না-করার জন্য রাজ্য জুড়েই পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে সচেতনতা প্রচার চলছে। তার পরেও মোবাইলের কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকা বেড়েই চলেছে। প্রচারে যে ওই প্রবণতা এখনও পুরোপুরি রোখা যায়নি, তার প্রমাণ মিলল আরও একবার। রবিবার সকালে হেডফোনে কথা বলতে বলতে হুগলির ভদ্রেশ্বরে রেললাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক যুবকের।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ভদ্রেশ্বর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে হেডফোনে কথা বলতে বলতে লাইন পার হয়ে আপ প্ল্যাটফর্মে উঠতে যাচ্ছিলেন কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী, ভদ্রেশ্বরেরই দীপক বেহরা (২২)। সেই সময়ই ডাউন লাইনে ছুটে আসছিল একটি দূরপাল্লার ট্রেন। কিন্তু দীপক তা খেয়াল করেননি। ট্রেনের ধাক্কায় লাইনের ধারে ছিটকে পড়ে ছটফট করতে থাকেন তিনি। মুখে এবং মাথায় গভীর ক্ষত হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কয়েকজন যাত্রী তাঁকে উদ্ধার করে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই দীপক মারা যান। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দেবব্রত দাস নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সেই সময় যুবকটি হেডফোনে কথা বলতে বলতে লাইন পার হচ্ছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, উনি ট্রেন দেখে নিজেকে সামলে নেবেন। কিন্তু উনি যে খেয়ালই করেননি, সেটা কেউ বুঝতে পারিনি। বুঝলে বাঁচাতে পারতাম।’’
দীপকের বাড়ি ভদ্রেশ্বরের আমবাগান অশোকনগর এলাকায়। সংসারে তাঁর বাবা ও ভাই রয়েছেন। মা মারা গিয়েছেন অনেক দিন। এক বছর আগে তিনি কলকাতার বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পান। কাকা ভাগীরথী বেহরা বলেন, ‘‘রাতের কাজ সেরে দীপক ভোরের ট্রেনে ফিরত। এ দিনও তেমনই ফিরছিল। ওর রোজগারেই সংসারটা চলত। সব শেষ হয়ে গেল।’’
হেডফোন কানে দিয়ে রেললাইন বা রাস্তা পেরোতে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু নতুন নয়। কয়েক মাস আগেই আরামবাগ স্টেশনের কাছে রেললাইনে বসে হেডফোনে গান শুনতে শুনতে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছিলেন এক যুবক। এ ক্ষেত্রেও প্রাথমিক তদন্তের পর রেল পুলিশ জানিয়েছে, দীপকের ক্ষেত্রেও ঘাতক সেই হোডফোনই। রেল পুলিশের দাবি, দীপক ফোনে কথা বলায় এতটাই মগ্ন ছিলেন যে ট্রেনের আওয়াজ শুনতে পাননি।
রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, এ ভাবে মোবাইল ব্যবহার না-করার জন্য প্রচার চালানো সত্ত্বেও অনেকেই সচেতন হচ্ছেন না। লাইন টপকে পারাপারের সময় মোবাইলে কথা বললে জরিমানা করা হয়। তা নিয়ে মানুষের ক্ষোভও রয়েছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে এমন দুর্ঘটনা কমবে না।